প্রয়াত প্রবীণ সিপিএম নেতা নেপালদেব ভট্টাচার্য। ১৯৮১-৮৮ সাল পর্যন্ত রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন নেপালদেব। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। শারীরিক অসুস্থতার কারণে গত কয়েক দিন ধরে বাইপাসের ধারের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন প্রবীণ বাম নেতা। সোমবার গভীর রাতে সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। একটি চলচ্চিত্রও নির্মাণ করেছিলেন নেপালদেব ভট্টাচার্য। পরিচালক নেপালদেবের নির্মিত ‘চাকা’ সিনেমায় অভিনয় করেন মিঠুন চক্রবর্তী। এসএফআইয়ের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘নেপালদাই এসএফআইয়ের ইতিহাসে অন্যতম সফল সাধারণ সম্পাদক, যিনি গোটা দেশে ঘুরে ঘুরে সংগঠন বিস্তারে কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছিলেন।’
ছাত্রাবস্থা থেকেই বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন নেপালদেব ভট্টাচার্য। প্রথম জীবনে ভারতের ছাত্র ফেডারেশনের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার এই নেতা। তিন মেয়াদের এই পদে ছিলেন তিনি। প্রথম দুই মেয়াদকালে তাঁর সঙ্গে এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সভাপতি ছিলেন বর্তমানে সিপিএমের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এমএ বেবি। তৃতীয় মেয়াদকালে ওই পদে ছিলেন প্রয়াত বাম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি। ১৯৮১-৮৮ সাল পর্যন্ত রাজ্যসভার সাংসদও ছিলেন নেপালদেব। তবে দলবিরোধী কাজের অভিযোগে ১৯৯৭ সালে নেপালদেবকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছিল সিপিএম। ২০০৩ সালে ফের তাঁকে সদস্যপদ দেয় সিপিএম। পরবর্তী সময়ে দলের রাজ্য কমিটির সদস্যও হয়েছিলেন তিনি।
২০১৫ সালে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক পদে বসেন নেপালদেব ভট্টাচার্য। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজারহাট-গোপালপুর থেকে সিপিএমের প্রার্থী হন তিনি, কিন্তু জিততে পারেননি। এরপর ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে দমদম থেকে তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায়ের বিরুদ্ধেও দাঁড়িয়েছিলেন। সেবারও পরাজিত হতে হয়। অসুস্থতার কারণে ধীরে ধীরে সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে যান নেপালদেব ভট্টাচার্য।
বামফ্রন্টের তরফে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার সকালে তাঁর মরদেহ হাসপাতাল থেকে প্রথমে সিটুর রাজ্য দপ্তর শ্রমিক ভবন এবং সিপিআই (এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির দপ্তর মুজফফর আহমদ ভবন হয়ে এসএফআই রাজ্য দপ্তর দীনেশ মজুমদার ভবন পৌঁছবে। তারপর দত্তবাগান মিল্ক কলোনির ‘বেলগাছিয়া ভিলা’য়, তাঁর নিজস্ব বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হবে। লেকটাউন বইমেলা অফিস হয়ে বেলা ১২টায় বারাসাতে সিপিআই(এম) উত্তর ২৪ পরগণা জেলা দপ্তরে পোঁছাবে। পার্টি জেলা দপ্তরে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর পর তাঁর মরদেহ সিটুর উত্তর ২৪ পরগণা জেলা দপ্তর ব্যারাকপুরে নিয়ে আসা হবে বেলা ১টায়। ব্যারাকপুর থেকে যাওয়া হবে তাঁর আদি বাসভবন ও প্রথম রাজনৈতিক কর্মক্ষেত্র ভাটপাড়ায়। ভাটপাড়া শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
নেপালদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করেছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। কুণাল বলেন, ‘সাংবাদিকতার সূত্রেই আলাপ। দারুণ আড্ডা ছিল। একটা সময়ে সিপিএম-কেন্দ্রিক সিনেমা তৈরি করেছিলেন। প্রথম শো হয়েছিল আলিমুদ্দিনের তিন তলায়। কিছুকাল আগেও সেই সিনেমা নিয়ে ফোনে কথা হল। আবার একদিন আড্ডার প্ল্যান হল। সেটা অবশ্য আর হয়ে ওঠেনি। রাজনৈতিক বিতর্ক যাই থাকুক, মানুষটা বর্ণময় ছিলেন। মনে থাকবে।’