শহরে অবৈধ নাগরিকের ভিড়! দু’দেশের পাসপোর্টধারী বাংলাদেশিদের সঙ্গে পাকিস্তানির সন্ধানে গোয়েন্দারা
প্রতিদিন | ১৩ মে ২০২৫
অর্ণব আইচ: পাকিস্তানে ভারতের প্রত্যাঘাতের মধ্যেই পর পর শহরে অবৈধ নাগরিকের সন্ধানে কলকাতা পুলিশ। গত কয়েকদিনেই কলকাতায় অন্তত পাঁচজন ভুয়ো নাগরিকের সন্ধান মিলেছে। সর্বশেষ সন্ধান মিলেছে পূর্ব কলকাতার ট্যাংরা এলাকা থেকে। তার বিরুদ্ধে পুলিশের পক্ষ থেকেই ভবানীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। কিছুদিন আগেই কড়েয়ার একটি ব্যবসায়ী পরিবারের অন্তত চারজন আসলে বাংলাদেশি হয়েও কলকাতার ভুয়ো নাগরিক বলে অভিযোগ পুলিশের।
গোয়েন্দা বিভাগের মতে, কলকাতা ছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে এই ভুয়ো নাগরিকরা। মাস কয়েক আগে কলকাতার উপকণ্ঠেও মিলেছিল ভুয়ো নাগরিকদের সন্ধান। মূলত বাংলাদেশি হলেও চোরাপথে এই দেশের ভুয়ো নাগরিকত্বও নিয়েছে তারা। যার জেরে তাদের মধ্যে বেশিরভাগেরই হাতে রয়েছে দুই দেশেরই পাসপোর্ট। আপাতত বাংলাদেশিরা ভুয়ো নাগরিকত্ব নিয়ে রয়েছে, এমন কিছু প্রমাণ মিললেও কিছু পাকিস্তানি এভাবে ভুয়ো পরিচয়পত্র নিয় নাগরিক পরিচয় দিয়ে কলকাতা ও বিভিন্ন জেলায় গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে, এমন সম্ভাবনা রয়েছে বলে অভিমত গোয়েন্দাদের।
কিছুদিন আগেই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের হাতে ধরা পড়েছে এই রাজ্যের বাসিন্দা বলে পরিচয় দিয়ে থাকা পাকিস্তানের নাগরিক আজাদ মল্লিক ওরফে আজাদ হোসেন। সে নিজেও ভুয়ো নাগরিকত্ব নিয়ে গা ঢাকা দিয়ে ছিল উত্তর ২৪ পরগনার বিরাটিতে। ওই ব্যক্তিও কয়েকশো বাংলাদেশি ও পাকিস্তানিকেও ভুয়ো নাগরিকত্ব পাইয়ে দিয়েছে বলে ইডির গোয়েন্দাদের অভিযোগ। কলকাতা-সহ রাজ্যে ভুয়ো পাসপোর্ট চক্র ধরা পড়ার পর ভুয়ো নাগরিকত্বের বিষয়টি নিয়ে তৎপর হয় পুলিশ। এবার বাংলাদেশিদের সঙ্গে সঙ্গে ভুয়া নাগরিকত্ব নিয়ে রাজ্যে থাকা পাকিস্তানিদেরও সন্ধান চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা। এখনও পর্যন্ত যে অবৈধ নাগরিকদের সন্ধান মেলেছে, তাদের আজাদ মল্লিকের চক্র ভুয়ো পাসপোর্ট তৈরি করে দিয়েছে কি না, গোয়েন্দারা তা জানার চেষ্টা করছে।
গোয়েন্দাদের সূত্র জানিয়েছে, এমন বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি রয়েছে, যারা পাসপোর্ট নিয়েই এই দেশে আসে। এর পর তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তারা কলকাতা-সহ রাজ্যের কিছু জায়গায় থেকে গিয়েছে, এমনই গোয়েন্দাদের কাছে খবর। তাদের কাছে পুরনো বাংলাদেশি বা পাক পাসপোর্ট রয়েছে। আবার চোরাপথে এই দেশের ভুয়ো পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে তারা তৈরি করেছে পাসপোর্ট। ভুয়ো নাগরিক হয়েও তারা এই দেশের নাগরিক বলে পরিচয় দিচ্ছে। এভাবে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও যারা কলকাতায় রয়ে গিয়েছে, তাদের সন্ধান চালাতে শুরু করেছে কলকাতা পুলিশের সিকিউরিটি কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন। এসসিও-র গোয়েন্দাদের তদন্তেই উঠে আসছে ভুয়া নাগরিকত্ব নিয়ে থাকা বিদেশি, বিশেষ করে বাংলাদেশিদের পরিচয়। পাকিস্তান ও পাক অধিগৃহীত কাশ্মীরে ভারতের প্রত্যাঘাতের আবহে এই বিষয়টির উপর পুলিশ গুরুত্ব দিচ্ছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি তদন্ত করতে গিয়েই এসসিও আধিকারিকরা জানতে পারেন যে, পূর্ব কলকাতার ট্যাংরার ডি সি দে রোডের বাসিন্দা শেখ রমজানের ভারতীয় পাসপোর্ট থাকলেও আসলে তিনি বাংলাদেশির বাসিন্দা। তাঁর বাবা ইয়াকুব আলি শেখ ওরফে ইয়াকুব শেখেরও আসল বাড়ি বাংলাদেশে। ঢাকা থেকে ইস্যু হওয়া বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে রমজান কলকাতায় এসেছিলেন। কিন্তু ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও তিনি এই দেশের ভুয়া পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেন। তারই ভিত্তিতে তিনি সংগ্রহ করেন ভারতীয় পাসপোর্ট। যদিও সম্প্রতি বিষয়টি সামনে আসার পর এসসিও-র পক্ষ থেকে রমজানের বিরুদ্ধে দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তারই ভিত্তিতে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।