• সুন্দরবনের মৈপীঠে জমজমাট বনবিবির মেলা, উৎসবে মাতলেন হাজার হাজার মানুষ
    আজকাল | ১৪ মে ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক:‌ প্রতিবছরের ন্যায় এবারও সুন্দরবনের ঐতিহ্যবাহী কুলতলি বিধানসভার মৈপীঠের বনবিবির মেলা যা জঙ্গল মেলা হিসেবে পরিচিত তা হয়ে গেল মঙ্গলবার। মানুষের বিশ্বাস ও প্রাচীন রীতি মেনে আজও চলে আসছে সুন্দরবন অঞ্চলের মৈপীঠের গভীর জঙ্গলে বনবিবির পুজো ও মেলা। এই মেলা দেখতে ও সুন্দরবনের সংস্কৃতি, রীতিকে দেখতে দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন জঙ্গলে।

    সুন্দরবন এলাকায় মানুষের জীবন জঙ্গল–নির্ভর। সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে ভয়ঙ্কর বাঘের সঙ্গে লড়াই করে জীবন–জীবিকা অতিবাহিত করেন এই অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ। জীবিকার সন্ধানে সুন্দরবনের গভীর ব্যাঘ্র সঙ্কুল নদীবেষ্টিত ম্যানগ্রোভের জঙ্গলে মধু, কাঁকড়া, মাছ আনতে যায় এখানকার বাসিন্দারা। আর এভাবেই চলে আসছে তাঁদের জীবন। গভীর জঙ্গলে বাঘের হাত থেকে বাঁচতে বনের দেবী বনবিবি তাদের ভরসা। দেবী বনবিবিকে পুজো দিয়ে মানত করে জীবনের ভয়কে তুচ্ছ করে এখানকার মানুষ বেরিয়ে পড়ে জঙ্গলের উদ্দেশে রুটি–রুজির সন্ধানে। মানুষের সেই বিশ্বাস ও ভরসাকে আঁকড়ে গভীর জঙ্গল থেকে মধু ও কাঁকড়া সংগ্রহ করে বাড়ি ফেরার পরেই বনবিবির মন্দিরে পুজো দিয়ে মানত পূরণ করেন এরা। প্রাণ নিয়ে বেঁচে ফিরে বাঘের উদ্দেশে জঙ্গলে মোরগ ছেড়ে দেন মধু ও কাঁকড়া সংগ্রহকারীরা। প্রাচীন এই রীতি ঘিরে বসে মেলাও। সুন্দরবনের হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই এই দেবীকে পুজো করেন।

    কুলতলির মৈপীঠ অঞ্চলের শনিবারের বাজার থেকে বেশ কিছুটা দুরে নগেনাবাদ গ্রামে মাকড়ি নদী পেরিয়ে যেতে হয় ঘন ম্যানগ্রোভের জঙ্গলে। এই গভীর জঙ্গলের ভিতরে দেবী বনবিবির এই মন্দির অতি সাধারণ দরমার বেড়া দেওয়া এসবেস্টসের চালায় তৈরি। এই মন্দিরে প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শেষ মঙ্গলবার বিরাট ধুমধাম করে পুজোর আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি পুজোকে কেন্দ্র করে বসে বিশাল মেলা। এই দিন হাজার হাজার মানুষ মৈপীঠের মাকড়ি নদী পেরিয়ে জঙ্গলের ভিতর বনবিবির মন্দিরে ভিড় করেন পুজোর উদ্দেশে। মাকড়ি নদীর এপারে মৈপীঠের নগেনাবাদ গ্রাম। আর ওপারে গভীর ম্যানগ্রোভের জঙ্গল যা বৈঠাভাঙির জঙ্গল নামে খ্যাত। যেখানে সুন্দরবনের বিখ্যাত রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের বাসস্থান। এই নদী পেরিয়েই ওপারের জঙ্গল থেকে বাঘ মামা প্রায়শই চলে আসে এপারের লোকালয়ে। কোমর সমান কাদায় নেমে নৌকায় নদী পারাপার, অত্যন্ত রোমাঞ্চকর এই যাত্রা। স্থানীয় মেলা কমিটি ও প্রশাসন থেকে নদী পারাপারের জন্য বিনামূল্যে নৌকার ব্যবস্থা করা হয় মেলার দিন। এছাড়াও সুন্দরবনের চতুর্দিক থেকে নৌকায় চেপে প্রচুর মানুষ জন আসেন এই স্থানে বনবিবির পুজো দিতে। নদীর ওপারে ঘন জঙ্গলের ভিতর মন্দিরের চারপাশে বনদপ্তরের রক্ষীরা পাহারা দেয়। জঙ্গলের ভিতর মন্দিরে যাতায়াতের পথ ও পুজোর এলাকাটা বেশ উঁচু করে জাল দিয়ে ঘেরাও থাকে বাঘের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য। 

    সুন্দরবনের মানুষের বিশ্বাস ও রীতি ও সংস্কৃতি নিয়ে এই বনবিবির মেলা বা স্থানীয় মতে জঙ্গল মেলা এক ভিন্ন অনুভূতির স্বাদ এনে দেয়। গোসাবা থেকে আগত পুঁটিরাম মণ্ডল, জয়নগর থেকে আগত সইদুল্লা মোল্লা সহ একাধিক মানুষ জানালেন, বছরের এই একটি দিনে বনবিবির পুজো অর্চনা ও মেলা হয় ধর্মীয় রীতি মেনে। আর প্রতিবছরের মতন এবছরও এই মেলায় আসতে পেরে খুশি। হাজার হাজার মানুষের সমাগমে বেশ জমজমাট হয়ে উঠল এবছরের এই বনবিবির মেলা বা জঙ্গল মেলা। 

     
  • Link to this news (আজকাল)