প্রবল দাবদাহে নাভিশ্বাস উঠেছে শহরবাসীর। রীতিমতো হাঁসফাঁস অবস্থা ট্রেন ও বাসের নিত্যযাত্রী থেকে শুরু করে ছোট-বড় ব্যবসায়ী, ট্রাফিক পুলিশ, বিভিন্ন যানবাহন কর্মী ও অফিস কর্মীদের। গরমের দাপটে শহরের জলাশয় এমনকি ট্যাঙ্কের জলের অবস্থাও ভয়াবহ। হাত দিলে হাত পুড়ে যাচ্ছে। প্রবল গ্রীষ্মের প্রকৃতির এই রুদ্ররোষে কলকাতা শহরের মানুষের যখন এই অবস্থা, তখন শহরের প্রাণীদের অবস্থা আরও ভয়াবহ। যার জেরে আলিপুর চিড়িয়াখানার পশুশালায় একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ভালুক, ক্যাঙ্গারুর পক্ষে এই দাবদাহ সহ্য করা সম্ভব হচ্ছে না। সেজন্য প্রবল তাপ থেকে রক্ষা করতে তাদের খাঁচায় এয়ার কুলারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু বিদেশি পাখিদের ঠান্ডা বাতাসের পরশ দিতেও ওই একই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। পাশাপাশি, চিড়িয়াখানার একাধিক প্রাণীকে সুস্থ রাখতে তাদের খাদ্যতালিকাতেও বদল আনা হয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে হাতি, বানর, শিম্পাঞ্জি, জিরাফ, জ়েব্রার মতো প্রাণীরা এমনটাই বন দপ্তর সূত্রের খবর।
সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে আলিপুর চিড়িয়াখানায় দুটি পূর্ণবয়স্ক ভালুকের সঙ্গে দু’টি শাবক রয়েছে। গরমে তাদের শরীর অত্যাধিক খারাপ হয়ে গিয়েছে। সেজন্য তাদের খাঁচায় এয়ার কুলার বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই ঘটনা ঘটেছে ক্যাঙারুর ক্ষেত্রেও।
আলিপুর চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, হরিণ ও ময়ূরের মতো প্রাণীদের ওআরএস দেওয়া হচ্ছে, যাতে অসুবিধা না হয়। গাজর, তরমুজ-সহ নানা ফল দেওয়া হচ্ছে হরিণগুলিকে। এমনিতেই প্রতি বছর গরম পড়লেই ময়ূর ও হরিণদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হয়। গরমে যাতে প্রাণীদের অসুবিধা না হয় সে জন্য জলের সঙ্গে ওআরএস মিশিয়ে দেওয়া হয়। তা ছাড়া প্রাণীদের শরীরে জলশূন্যতা রুখতে টাটকা শাকসব্জির সঙ্গে ভেজানো ছোলা, আখের গুড় ও বিটনুনও খাওয়ানো হয়।
প্রসঙ্গত গত এপ্রিল মাসেও গরমে তেমন সমস্যায় পড়তে হয়নি আলিপুর চিড়িয়াখানার প্রাণীদের। কিন্তু মে মাসের গোড়ার দিক থেকেই প্রাণীদের পক্ষে তাপমাত্রা অসহনীয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে তৃণভোজী প্রাণী ও বাঘ, সিংহের মতো প্রাণীদের অতিরিক্তি জলের বন্দোবস্ত করতে হয়েছে। গ্রীষ্মের প্রবল দাবদাহে খাঁচায় বন্দি বন্যপ্রাণীদের নাজেহাল অবস্থা দেখে আলিপুর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বন দপ্তরের দ্বারস্থ হন। বনদপ্তরের অনুমতি পাওয়ার পরই ভালুক, ক্যাঙারু ও বিদেশি পাখিদের খাঁচায় এয়ার কুলার বসানো হয়। এ ছাড়া পশুপাখির খাদ্য তালিকাতেও বদল আনা হয়েছে বন দপ্তরের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করেই।
বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা জানিয়েছেন, গরমের কারণে যাতে কোনও পশুপাখি অসুস্থ না হয়ে পড়ে, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আলিপুর চিড়িয়াখানার পাশাপাশি, রাজ্যের অন্যত্র থাকা চিড়িয়াখানা এবং অভয়ারণ্যগুলিতেও একই পদক্ষেপ করতে বলেছেন মন্ত্রী।
এবিষয়ে উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে মোট ছ’টির বেশি চিড়িয়াখানা ও ১৫টি জাতীয় উদ্যান ও অভয়ারণ্য রয়েছে। কিন্তু রাজ্যে এখনও পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় জাতীয় উদ্যান ও অভয়ারণ্যে পর্যাপ্ত ঘাস ও পাতার ঘাটতি রয়েছে। সেজন্য হরিণ সহ অন্যান্য তৃণভোজী প্রাণীদের যাতে খাদের সমস্যা না হয়, সেদিকে নজর দিতে বলা হয়েছে বনদপ্তরের পক্ষ থেকে।