গিয়েছিলেন কাজে, বাংলাদেশি সন্দেহে রাজস্থান পুলিসের হাতে আটক শিশু সহ কোচবিহারের ৫
বর্তমান | ১৪ মে ২০২৫
সংবাদদাতা, দেওয়ানহাট: পরিবার নিয়ে শ্রমিকের কাজ গিয়ে রাজস্থান পুলিসের হাতে ১০ দিন ধরে আটক হয়ে রয়েছেন শিশু সহ কোচবিহারের পাঁচ বাসিন্দা। এ খবর গ্রামে পৌঁছতেই উদ্বিগ্ন দুই পরিবারের সদস্যরা। বাংলাদেশি সন্দেহে রাজস্থান পুলিস আটকে রেখেছে তাঁদের। রাজস্থানে আটক এক পরিযায়ী শ্রমিকের বাবা তাঁর ছেলে, বউমা ও নাতির মুক্তির ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য মঙ্গলবার কোচবিহারের জেলাশাসকের কাছে লিখিত আবেদন জানান।
ওই দুই পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ৪ মে রাজস্থানের শিকর জেলার পাটান থানার পুলিস ইটভাটা থেকে বাংলাদেশি সন্দেহে তুলে নিয়ে যায়। তারপর থেকে তাদের একটি বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছে। ভারতীয় হওয়ার প্রমাণ হিসেবে ভোটার কার্ড, আধার কার্ড সহ অন্যান্য কাগজপত্র দেখালেও তাঁদের ছাড়া হয়নি বলে অভিযোগ আটক পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবারের। রাজস্থানের পুলিসের হাতে বন্দি কোচবিহারের পাঁচ বাসিন্দার মধ্যে তিনজন কোচবিহার-২ ব্লকের টাকাগছ গ্রাম পঞ্চয়েতের কারিশাল গ্রামের। বাকি দু’জন দিনহাটা-২ ব্লকের চৌধুরীহাট পঞ্চায়েতের পূর্ব জায়গীর বালাবাড়ি গ্রামের।
রাজস্থান পুলিসের হাতে আটক ওবায়েদুল খন্দকার এদিন ফোন বলেন, আমি ও স্ত্রী পাটান থানার অধীন একটি ইটভাটায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করি। গত ৪ মে ইটভাটা থেকে বাংলাদেশি সন্দেহে এখানকার অন্য শ্রমিকদের সঙ্গে স্ত্রী ও আমাকে পুলিস তুলে নিয়ে এসে একটি বাড়িতে আটকে রেখেছে। সঙ্গে শুধু মোবাইল ফোনটা রাখতে দিয়েছে। সেজন্য বাড়িতে ফোন করে আমাদের আটকে থাকার কথা জানাতে পেরেছি।
তিনি আরও বলেন, আমার বাড়ি চৌধুরীরহাটের পূর্ব জায়গীর বালাবাড়ি গ্রামে। ভারতীয় আমি। ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড, স্থানীয় বিধায়কের রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেটও পুলিসকে দিয়েছি। তারপরেও আমাদের ছাড়ছে না। জিজ্ঞাসা করলে বলছে ছেড়ে দেবে, কিন্তু আটকেই রেখেছে। ১০ দিন ধরে আমরা এখানেই আটকে আছি। কোচবিহারের জেলা প্রশাসন আমাদের এখান থেকে ছড়ানোর ব্যবস্থা করুক।
কোচবিহার শহর সংলগ্ন টাকাগছ গ্রাম পঞ্চয়েতের কারিশালের আটকে থাকা আরএক বাসিন্দা নূর সালাম হোসেনও টেলিফোনে বলেন, পেটের টানে রোজগার করতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এখানে ইটভাটায় কাজ করতে এসেছি। ৪ মে ইটভাটা থেকে আমাদের তুলে নিয়ে আসে পুলিস। এখানে একটি বাড়িতে আমাদের আটকে রেখেছে। আমরা যে বাংলাদেশি নই, ভারতীয় তার সমস্ত নথি দেখিয়েছি। পুলিস শুধু বলছে, ছেড়ে দেবে। কিন্তু ছাড়ছে না। এখানে আমার কোচবিহারের মোট পাঁচজন আটকে রয়েছি।
আটক নূর সালাম হোসেনের বাবা নেছামুদ্দিন মিয়াঁ বলেন, ইটভাটায় কয়েক বছর ধরে ছেলে কাজ করে। বাংলাদেশি সন্দেহে পুলিস ছেলে, বউমা ও সাড়ে তিন বছরের নাতিকে তুলে নিয়ে গিয়েছে। ভারতীয় হওয়ার সবরকম প্রমাণপত্র দেখালেও ছাড়ছে না সেখানকার পুলিস। উৎকণ্ঠায় আছি। এদিন আমি পুণ্ডিবাড়ি থানার পুলিস ও বিডিও’কে জানিয়েছি। পাশাপাশি কোচবিহারের জেলাশাসকের দৃষ্টিতে বিষয়টি এনেছি। এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত ওদের আটকেই রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে কোচবিহারের জেলাশাসক অরবিন্দকুমার মিনা বলেন, সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিস সুপারের সঙ্গে আমি ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেছি। তিনি আশ্বস্ত করেছেন এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।