সংবাদদাতা মালদহ: স্মার্টফোন চাই। অভিভাবকরা কিনে দিতে নারাজ। অগত্যা দিল্লিতে গিয়ে কোনওভাবে উপার্জন করে স্বপ্ন পূরণ করতে বাড়ি ছাড়ল শিলিগুড়ির চার নাবালক। কিন্তু মাঝপথে দুই সঙ্গী বেঁকে বসায় বাকিরাও তাদের সঙ্গে ট্রেন থেকে নেমে পড়ে। অবশেষে জিআরপি ও মালদহ শিশু কল্যাণ কমিটির সাহায্যে শুরু হয়েছে তাদের বাড়ি ফেরানোর প্রক্রিয়া। স্মার্টফোন হাতে পেতে অল্পবয়সীরা কতটা মরিয়া হতে পারে, এই ঘটনা তারই একটি উদাহরণ বলে মনে করছেন সমাজবিদরা।
মালদহ জেলা শিশু কল্যাণ কমিটির চেয়ারম্যান অম্বরীশ বর্মন বলেন, ওই চার নাবালক শিলিগুড়ির যে অংশের বাসিন্দা, সেটি ভৌগলিকভাবে জলপাইগুড়ি প্রশাসনিক জেলার অন্তর্গত। সোমবার ওই চার নাবালককে পুরাতন মালদহ রেল স্টেশন থেকে উদ্ধার করে রেলের চাইল্ড হেল্প ডেস্কের হাতে তুলে দেন জিআরপি জওয়ানরা। পরে চাইল্ড হেল্প ডেস্ক যোগাযোগ করে আমাদের সঙ্গে। ওই নাবালকদের নিজেদের কাছে নিয়ে এসেছি।
নাবালকদের আপাতত দক্ষিণ দিনাজপুরের একটি হোমে রাখা হয়েছে। সেখানে কাউন্সেলিং করার পর তাদের পরিবারের কাছে ফেরানো হবে। রেলের চাইল্ড ডেস্কের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে ওই চারজনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
অম্বরীষবাবু জানান, নাবালকরা জানিয়েছে বাড়ি থেকে স্মার্টফোন কিনে না দেওয়ায় তাদের অভিমান হয়েছিল। তিনজনই ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। চতুর্থ জন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। সে বাকি তিনজনকে বলে দিল্লিতে তার এক আত্মীয় রয়েছে। সেখানে গিয়ে কাজ করলে স্মার্টফোন কেনার টাকা জোগাড় হয়ে যাবে। ওই লিডারের পরামর্শেই ডাউন কামাখ্যা এক্সপ্রেসে উঠে পড়ে চারজন। তবে তাদের মধ্যে দু’জন বাড়ি থেকে পালাতে খুব একটা আগ্রহী ছিল না। ট্রেন যত এগিয়েছে, দু’জনের মন খারাপ হতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত পুরাতন মালদহ স্টেশনে নেমে যায় তারা। দলের লিডার সহ বাকিরাও আর এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেনি। স্টেশনে প্রহরারত জিআরপি জওয়ানদের দেখে সবকিছু খুলে বলে চার নাবালক। শেষ পর্যন্ত এসে পড়ে জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির দপ্তরে।
জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনকেও অনুরোধ করা হয়েছে ওই কিশোরদের আর্থ সামাজিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার জন্য। তবে যে বিষয়টি সামনে এসেছে তা হল, চার নাবালকের বেশকিছু পারিবারিক ও আর্থিক সমস্যা রয়েছে। বাড়ি ছাড়ার পিছনে সেই সংক্রান্ত মনস্তাত্বিক কারণ রয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির সদস্যরা।
শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিসের ডিসিপি (পূর্ব) রাকেশ সিং বলেন, চার নাবালককে মালদহ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। পরিবারকে খবর দেওয়ার পর তদন্ত চলছে।