উত্তরবঙ্গের উন্মুক্ত বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার দাবি গ্রামবাসীদের, ‘চিকেনস নেকের’ নিরাপত্তা পর্যালোচনা গোয়েন্দা কর্তার
বর্তমান | ১৪ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: ভারত-পাক যুদ্ধ বিরতি চললেও উত্তরবঙ্গের বাংলাদেশ সীমান্ত কার্যত থমথমে। বিশেষ করে উন্মুক্ত সীমান্ত নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারতীয় গ্রামবাসীরা। তাঁরা উন্মুক্ত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া চাইছেন। তাঁদের আশঙ্কা, সংশ্লিষ্ট এলাকাই ব্যবহার করতে পারে বাংলাদেশের বর্তমান মিত্র দেশ পাকিস্তান। এদিকে, শিলিগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গের নিরাপত্তা ও নজরদারি ব্যবস্থা পর্যালোচনা করেন এডিজি (আইবি) জ্ঞানবন্ত সিং। তিনি গোয়েন্দা সহ পুলিস কর্মীদের সর্বদা সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন বলে খবর।
ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ব্লকগুলির মধ্যে ফাঁসিদেওয়া অন্যতম। ‘চিকেনস নেক’ শিলিগুড়ি শহর থেকে কয়েক কিমি দূরে সংশ্লিষ্ট ব্লকের অবস্থান। ব্লকের চটহাট-বাঁশগাঁও, ফাঁসিদেওয়া-বাঁশগাঁও কিসমত ও জালাস নিজামতারা এই তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পাশে বাংলাদেশ সীমান্ত। স্থানীয় সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট তিনটি পঞ্চায়েতে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩ কিমি। যারমধ্যে মুড়িখাওয়া, বন্দরগছ, ডাঙাপাড়া প্রভৃতি এলাকা এখনও উন্মুক্ত। কাঁটাতারের বেড়া নেই। সীমান্ত সংলগ্ন জমিতে চা বাগান ও চাষের জমি রয়েছে। এরবাইরে কিছু জায়গা দিয়ে বিস্তৃত মহানন্দা নদী।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা উন্মুক্ত সীমান্ত দিয়ে এপারে প্রবেশ করে মাঝেমধ্যেই গোরু পাচার সহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করে। তাছাড়া, এখন বাংলাদেশের পরম বন্ধু পাকিস্তান। কাজেই পাক জঙ্গিরা সংশ্লিষ্ট পথ ব্যবহার করে এপারে অনুপ্রবেশ করতে পারে। তাই উন্মুক্ত ওই এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া দিতে হবে। চটহাট-বাঁশগাঁও পঞ্চায়েতের সদস্য মহম্মদ জালালউদ্দিন বলেন, গ্রামবাসীদের দাবি ন্যায্য। নিরাপত্তার স্বার্থে অবিলম্বে উন্মুক্ত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া প্রয়োজন।
সংশ্লিষ্ট এলাকা বিএসএফের উত্তরবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের শিলিগুড়ি সেক্টরের অধীনে। বিএসএফ সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া পাতার প্রক্রিয়া চলছে। ফাঁসিদেওয়ার ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক শুভ্রজিৎ মজুমদার বলেন, কাঁটাতারের বেড়ার জন্য বেশ কিছু এলাকায় জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এখন সামান্য কিছু এলাকায় জমি অধিগ্রহের প্রক্রিয়া চলছে। তা দ্রুত শেষ হবে বলেই আশা করছি।
শুধু ফাঁসিদেওয়া নয়, কোচবিহার থেকে মালদহ পর্যন্ত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অনেক এলাকা এখনও উন্মুক্ত। বিএসএফ সূত্রে খবর, পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকার দৈর্ঘ্য ২২১৭ কিমি। যারমধ্যে বিএসএফের উত্তরবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের অধীনে রয়েছে ৯৩২.৩৯ কিমি। মেখলিগঞ্জ থেকে শিলিগুড়ি, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর এবং মালদহের একাংশ রয়েছে। এরমধ্যে ৩০ শতাংশ এলাকা উন্মুক্ত। কিছু এলাকার উপর দিয়ে নদী প্রবাহিত। এরবাইরে মালদহের একাংশ সাউথ বেঙ্গল এবং কোচবিহার একাংশ গুয়াহাটি ফ্রন্টিয়ারের অধীনে।
কয়েকমাস আগে বাংলাদেশের শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে বিএসএফ বেড়া দেওয়ার চেষ্টা করে। সেই সময় কিছু সীমান্তে গোলমালও হয়। তাই ফাঁসিদেওয়ার মতো সর্বত্র গ্রামবাসীরা কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করছেন। বিএসএফের এক কর্তা জানান, উন্মুক্ত এলাকাগুলিতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। টহলদারি বাড়ানোর পাশাপাশি সিসি ক্যামেরা, নাইট ভিসন প্রভৃতির মাধ্যমে নজরদারি চলছে।
এদিকে, সোমবার শিলিগুড়িতে পুলিসের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এডিজি (আইবি)। পুলিস সূত্রের খবর, ‘চিকেনস নেক’ সহ গোটা উত্তরবঙ্গের বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান প্রভৃতি সীমান্তের অবস্থা নিয়ে এডিজি আলোচনা করেন। যুদ্ধ বিরতি চললেও সকলকে সদা সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন বলে খবর।
জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের দক্ষিণ বেরুবাড়ি গ্ৰাম পঞ্চায়েতের নলজোওয়া পাড়া এলাকার উন্মুক্ত সীমান্ত। - নিজস্ব চিত্র।