• বাজ ও ঝড়ের তাণ্ডবে বাঁকুড়া জেলায় মৃত চার
    বর্তমান | ১৪ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া ও সংবাদদাতা, বিষ্ণুপুর: সোমবার রাতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বাঁকুড়ায় মোট চারজনের মৃত্যু হয়েছে। মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে চিমনি নির্মাণের নিযুক্ত দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়। পাশাপাশি বাঁকুড়া ও গঙ্গাজলঘাটিতে বজ্রাঘাতে দু’জন মারা যান। পুলিস জানিয়েছে, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে দুর্ঘটনায় মৃত শ্রমিকদের নাম কুনওয়ার পাল(১৯) ও প্রেমশঙ্কর(৩১)। তাঁদের বাড়ি উত্তরপ্রদেশের বেরিলি জেলায়। বজ্রপাতে মৃতদের নাম ক্ষেত্রমোহন মাল(৮৫) ও তপন বাউরি(৪৬)। প্রথমজনের বাড়ি বাঁকুড়া সদর থানার গোপীনাথপুর গ্রামে। দ্বিতীয়জন গঙ্গাজলঘাটি থানার ভক্তাবাঁধ গ্রামের বাসিন্দা। ঘটনায় মৃতদের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে। ওইদিন ঝড়-বৃষ্টিতে বিষ্ণুপুর ও জয়পুর সহ জেলার অন্যান্য জায়গাতেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।  

    বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (বিপর্যয় মোকাবিলা) নকুলচন্দ্র মাহাত বলেন, বজ্রাঘাতে মৃত দু’জনের পরিবার সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পাবে। মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের এক আধিকারিক বলেন, দুর্ঘটনায় মৃতদের নিকটাত্মীয়কে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থার তরফে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে দূষণ নিয়ন্ত্রক চিমনি বসানোর কাজ চলছিল। সেখানে বেশ কয়েকজন শ্রমিক কাজ করছিলেন। সোমবার সন্ধ্যার পর বাঁকুড়া জেলাজুড়ে ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে শ্রমিকরা চিমনির পাশে একটি টিনের ছাউনির নীচে আশ্রয় নেন। ওইসময় প্রবল বেগে ঝড় বইতে শুরু করে। ঝড়ে চিমনিতে রং করার জন্য তৈরি অস্থায়ী লোহার মাচা ভেঙে টিনের ছাউনি ও শ্রমিকদের উপর পড়ে। তাতে সেখানে থাকা শ্রমিকরা জখম হন। বাকিরা কোনওরকমে সেখান থেকে বের হতে সক্ষম হলেও তিনজনে চাপা পড়ে যান। বেশ কিছুক্ষণ পর তাঁদের উদ্ধার করা হয়। জখমদের মধ্যে কুনওয়ার ও প্রেমশঙ্করের চোট গুরুতর ছিল। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। কৃষ্ণ পাল নামে অন্য এক জখম শ্রমিককে উদ্ধার করে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

    হঠাৎ ঝড়বৃষ্টি শুরু হওয়ায় অনেকেই তড়িঘড়ি বাড়ি ফেরার চেষ্টা করেন। সেই সময় রাস্তায় বাজ পড়লে তপন ও ক্ষেত্রমোহনবাবুর মৃত্যু হয়। ওই রাতে দমকা ঝড়ে বিষ্ণুপুর ও জয়পুরের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ওইদিনের ঝড়ে জয়পুরের নতুনগ্রামের লোহারপাড়ার বাসিন্দা অমর লোহারের বাড়ির উপর মোটা গাছ ভেঙে পড়ে। তাতে বাড়ির চারজন সামান্য জখম হন। মঙ্গলবার ব্লক প্রশাসনের তরফে সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা গিয়ে গাছ কেটে সরিয়ে দেন। এছাড়াও প্রশাসনের তরফে তাঁদের কিছু শুকনো খাবারও দেওয়া হয়। ওইদিন বিষ্ণুপুরের জন্তা গ্রামে এক ব্যক্তির টিনের চাল প্রায় ৫০মিটার উড়িয়ে নিয়ে অন্য এক ব্যক্তির ছাদে ফেলে। এছাড়াও বিষ্ণুপুরের কংসাবতী অফিসের একটি কোয়ার্টারের দরজার সামনে গাছ পড়ে যায়। বাসিন্দারা যাতায়াতের সমস্যায় পড়েন। মঙ্গলবার সকালে গাছ সরানো হয়। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)