নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: নদীয়া জেলার চার হাজারের বেশি ছাত্রী কন্যাশ্রীর কে-২ প্রকল্পের জন্য নাম তোলেনি বলে জানা গিয়েছে। প্রশাসনের আধিকারিকদের অনুমান, ওই ছাত্রীরা আঠারো পেরতেই হয় বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে অথবা স্কুলছুট হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি উচ্চশিক্ষা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ছাত্রীরা? কারণ কন্যাশ্রীর কে-২ প্রকল্পে ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার জন্য এককালীন আর্থিক সাহায্য করা হয়। কে-২ প্রকল্পের জন্য নাম তুলতে ছাত্রীদের এই অনীহা উদ্বেগ বাড়িয়েছে শিক্ষক মহলের।
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, কে-২ প্রকল্পে একবারই টাকা দেওয়া হয়। আবেদন এলেই আমরা তাতে দ্রুত অনুমোদন দিই। যাতে ছাত্রীদের পড়াশোনায় কোনও সমস্যা না হয়।
নদীয়া জেলার শিক্ষাদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, নদীয়া জেলায় ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে কে-২ প্রকল্পে ছাত্রীদের নাম তোলানোর জন্য নির্দিষ্ট টার্গেট বেঁধে দিয়েছিল রাজ্য সরকার। সেইমতো একবছরে ২৬ হাজার ৯৪৩ জন ছাত্রীকে কে-২ প্রকল্পের আওতায় আনার কথা ছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এক বছরে ২২ হাজার ৬৪৩ জন ছাত্রীকে কে-২ প্রকল্পের আওতায় আনা গিয়েছে। অর্থাৎ বাকি ৪ হাজার ৩০০ জন ছাত্রীর হদিশ মেলেনি।আবেদন করা ছাত্রীদের মধ্যে ২১ হাজার ৮৯৭ জনের আবেদন অনুমোদন করা হয়েছে। কে-২ প্রকল্পে ছাত্রীদের নাম তোলানোর ক্ষেত্রে স্কুলের শিক্ষকদের বড় ভূমিকা থাকে। কারণ কোন ছাত্রী স্কুলে আসছে বা কার বিয়ে হয়ে গিয়েছে তা অনেক সময়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, কে-২ প্রকল্পের জন্য আবেদন না করা ছাত্রীরা আঠারো পেরতেই বিয়ে করে নিয়েছে।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, আঠারো বছরের বেশি কিন্তু উনিশ বছরের কম যেকোনও অবিবাহিত ছাত্রী কে-২ প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে পারেন। তাঁদের রাজ্য সরকারের তরফ থেকে এককালীন ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। তেমনি নদীয়া জেলায় গত অর্থবছরে এককালীন অর্থ সাহায্য পেয়েছেন ১৯ হাজার ৫৪৬ জন ছাত্রী।
ছাত্রীদের মধ্যে উচ্ শিক্ষায় অনীহার বিষয়টি নদীয়া জেলার চলতি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাতেও লক্ষ্য করা গিয়েছিল। কারণ এবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য নাম নথিভুক্ত করায় ১০ হাজার ১১৪ জন ছাত্রী। কিন্তু তাঁদের মধ্যে আড়াইশো জন ছাত্রী পরীক্ষায় বসেনি। শিক্ষক মহলের দাবি, যারা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় নাম তুলেও পরীক্ষায় বসছে না বা কে-২ প্রকল্পে নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করছে না, তাঁদের সবাইকে বিবাহিত বলে ধরে নেওয়া হয়।