• বৃষ্টি নেই, জলের অভাবে জেলায় পাটের বৃদ্ধি কমছে, চিন্তায় চাষিরা
    বর্তমান | ১৪ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: মুর্শিদাবাদ জেলাজুড়ে তীব্র দাবদাহ চলছে। গত ১০ দিন এক ফোঁটা বৃষ্টির দেখা নেই। ব্যাপক সমস্যায় পড়েছেন পাট চাষিরা। জলের অভাবে পাট গাছের বৃদ্ধি আটকে যাওয়ায় বেশ উদ্বিগ্ন জেলার চাষিরা। দু’পয়সা লাভের আশায় কেউ জমি লিজ নিয়ে, কেউ বা নিজের জমিতে পাট চাষ করেছেন। কিন্তু তাঁদের সেই আশার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে তীব্র দাবদাহ। জলের অভাবে কোথাও পাটের গোড়া শুকিয়ে গিয়েছে, কোথাও গাছ নুয়ে পড়েছে। জলসেচ দিয়ে কোনও রকমে গাছ বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন কেউ কেউ। মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রায় এক লক্ষ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। কিন্তু এখন গাছ বাঁচিয়ে রাখাই চ্যালেঞ্জ চাষিদের। কয়েকদিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে, গাছের দৈর্ঘ্যও আর বাড়বে না। ফলে পাটের আঁশের দামও মিলবে না। জেলায় লক্ষ লক্ষ চাষি পাট চাষের সঙ্গে যুক্ত। সকলেই বেকায়দায় পড়েছেন। 

    সামশেরগঞ্জের পাটচাষি বেলারুদ্দিন শেখ বলেন, পাট চাষ করে এবার কোনও লাভ করতে পারব না। জলের অভাবে পাট গাছের বৃদ্ধি থমকে গিয়েছে। জলসেচ করতে হচ্ছে। সেই করতে গিয়ে এত খরচ হচ্ছে যে, আমরা বুঝতে পারছি না কীভাবে লাভ হবে? হরিহরপাড়ার চাষি আরাজুল ইসলাম বলেন, এবার ২ বিঘা ৫ কাঠা জমি লিজ নিয়ে পাট চাষ করেছি। তীব্র দাবদাহে গাছ শুকিয়ে নুয়ে পড়েছে। পাটের গোড়া শুকিয়ে গিয়েছে। ফেটে গিয়েছে মাটিও। প্রতি বিঘা জমি পাঁচ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে চাষ করেছি। আর বিঘে প্রতি পাট চাষ করতে খরচ হয়েছে ছয়-সাত হাজার টাকা। তীব্র গরমে পাট মরতে শুরু করছে। পরিস্থিতি এমন যে লাভের আশা ছেড়ে দিয়েছি। সেচ দিয়ে এখন এই চাষের খরচ উঠবে কি না, বুঝতে পারছি না। দ্রুত বৃষ্টি না হলে আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ হবে। 

    পাট চাষের এমনই অবস্থা গোটা মুর্শিদাবাদ জেলায়। প্রতি বছর পাটের ভালো দাম মেলে না। তবুও অর্থকরী ফসলের চাষ করে স্বপ্ন দেখেন জেলার চাষিরা। গত দু’বছর ধরে বৃষ্টির অভাবে পাট পচাতেও সমস্যা হয়েছিল চাষিদের। তবে এবারের বৃষ্টিহীন অবস্থা চাষের শুরুতেই বেকায়দায় ফেলেছে সকলকে। জেলার পাট চাষিরা আরও জানালেন, বৃষ্টি না হলে পাট মোটা হয় না। সেইসঙ্গে রংটাও ফোটে না। গত বছরও এই সময়ে বৃষ্টি হয়েছিল। পাট লম্বায় বেশ ভালোই হয়েছিল। এবার বেশির ভাগ পাট বুক সমান লম্বা হয়েছে। কোথাও আবার উচ্চতা আরও কম। ঝেঁপে বৃষ্টি না হলে গাছ আর বাড়বে কি না, বলা মুশকিল। 

    ইসলামপুরের পাট চাষি ফকির শেখ বলেন, নিজের অর্ধেক জমিতে পাট চাষ করেছি। বাকি অর্ধেক জমিতে সব্জি চাষ করেছিলাম। সব্জি তুলে হাটে বিক্রি করছি। সেই টাকা এনে এখন জলসেচ দিয়ে পাট গাছ বাঁচিয়ে রাখতে হচ্ছে। এমন অবস্থা হবে জানলে আগে থেকেই গোটা জমিতে সব্জি লাগিয়ে রাখতাম। পাট চাষের জন্য প্রতি বছরই প্রতিকূল আবহাওয়ায় সমস্যা বেড়েছে চাষিদের। যে কারণে পাট চাষের জমির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমছে। গত বছরের তুলনায় এবছরও জেলায় পাট চাষের জমির পরিমাণ কমেছে। অনেকেই পাটের বদলে বিকল্প চাষের দিকে ঝুঁকছেন বলেই দাবি কৃষিদপ্তরের আধিকারিকদের। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)