• ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ নিয়ে ছড়ানো হচ্ছে এআই ভিডিও, সোশ্যাল মিডিয়ায় কঠোর নজরদারি
    বর্তমান | ১৪ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের আবহে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দ্বারা তৈরি নানা ভিডিও এবং ছবি ছড়িয়ে পড়ছে সামাজিক মাধ্যমে। বিভ্রান্তিমূলক খবরের পাশাপাশি নানা ধর্মীয় উস্কানিমূলক পোস্ট বিভেদ সৃষ্টি করছে। বিষয়টি নিয়ে সচেতন মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিস। মুর্শিদাবাদ জেলায় একাধিকবার সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট নিয়ে অশান্তি হয়েছে। এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই সামশেরগঞ্জ, সূতি ও ধুলিয়ানে হিংসা ছড়িয়ে পড়েছিল। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ ছিল জঙ্গিপুর মহকুমায়। তাই কোনওরকম উস্কানিমূলক পোস্ট এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে যাতে অশান্তির সৃষ্টি না হয় সেই জন্য সজাগ রয়েছে দুই পুলিস জেলার আধিকারিকরা। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নজরদারি বাড়িয়েছে জেলা পুলিসের সাইবার ক্রাইম বিভাগ। বিশেষ করে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং টুইটারে নজরদারি চালাচ্ছে তারা। প্রতিদিনই প্রায় ৪০ থেকে ৫০টি সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট ডিলিট করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আবেদন জানাচ্ছে সাইবার থানা। 

    মুর্শিদাবাদ পুলিস জেলার পাশাপাশি জঙ্গিপুর পুলিস জেলার সাইবার ক্রাইম বিভাগও একই রকম তৎপর। সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে, খুব সহজেই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ছবি এবং ভিডিও তৈরি করা হচ্ছে। ভারত-পাকিস্তান দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার পরিস্থিতিতে নানা রকমের পোস্ট সামনে আসছে। বিশেষ করে যে সমস্ত পোস্টে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা চলছে সেগুলি চিহ্নিত করে তা রিপোর্ট করছে সাইবার থানার পুলিস। অনেক সময়ে রিপোর্ট করার পরেও সোশ্যাল মিডিয়ার ওয়ালে তা চোখে পড়ছে। সেগুলি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার ও ইউটিউব কর্তৃপক্ষকে সরাসরি আবেদন করছেন পুলিস আধিকারিকরা। 

    সাইবার থানার এক আধিকারিক বলেন, মুর্শিদাবাদে প্রায়শই ধর্মীয় উস্কানিমূলক পোস্ট করা হয় সমাজমাধ্যমে। ভারত-পাকিস্তান এই উত্তেজনার আবহে অনেকেই কোনও তথ্য যাচাই না করেই ভুলভাল পোস্ট করে দিচ্ছে। আমরা সবদিকেই নজর রাখছি। বিভিন্ন প্রোফাইল আমাদের নজরে রয়েছে। উস্কানিমূলক পোস্টগুলি আমরা সঙ্গে সঙ্গে ডিলিট করার চেষ্টা করছি।

    এক সাইবার বিশেষজ্ঞ বলেন, চ্যাট জিপিটির মাধ্যমে খুব সহজেই একটা স্টোরি লাইন তৈরি করা হচ্ছে। সেই স্টোরি পোস্ট করা হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের অ্যাপে। সেখান থেকে সহজে বিভিন্ন সিন তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। সেই সিনগুলি ডাউনলোড করে ভিডিও অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে সেগুলি জুড়ে সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য ভিডিও তৈরি হচ্ছে। কিছু আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অ্যাপ্লিকেশন যেমন, লিওনার্দো এআই, জেমিনি এআই, রানওয়ে এম এল, কলজিয়ানের মাধ্যমে খুব ভালো সিন তৈরি হয়ে যাওয়ায় এই ধরনের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে বাড়ছে। যে ভিডিওগুলো এক ঝলকে দেখলে আসল এবং নকল পার্থক্য করা কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ফলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। 

    আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ছাড়াও বেশ কিছু আসল ঘটনার ভিডিও মুর্শিদাবাদের ঘটেছে বলে বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট করা হচ্ছে বলেই দাবি করেছে পুলিস। সোমবারও মঙ্গলবার পর পর দু’টি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। জেলা পুলিসের তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় ভিডিওগুলি অন্য জেলার। মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত পুলিস সুপার (লালবাগ) রাসপ্রিত সিং জানিয়েছেন, একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেই ভিডিওটি বাঁকুড়া জেলার। কিন্তু সেটা মুর্শিদাবাদের বলে অনেকেই প্রচার করছিল। এই ধরনের বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট থেকে আমরা সাধারণ মানুষজনকে সতর্ক করছি। সোশ্যাল মিডিয়াতে আমাদের কড়া নজরদারি চলছে।
  • Link to this news (বর্তমান)