মেদিনীপুর পুরসভায় ‘অপারেশন পরিষ্কার’: পরিষেবা, দুর্নীতি সহ বহু ইস্যুতে বিক্ষোভ, ভাঙচুর
বর্তমান | ১৪ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর: তৃণমূল পরিচালিত মেদিনীপুর পুরসভায় ভাঙচুর চালালেন তৃণমূলেরই কয়েকজন কাউন্সিলার। মঙ্গলবারের এই ঘটনায় নিন্দার ঝড় শহরজুড়ে। অভিযুক্ত কাউন্সিলাররা এই ঘটনাকে ‘অপারেশন পরিষ্কার’ নাম দিয়েছেন। পুরসভার আধিকারিকরা বেশ কয়েকজন কাউন্সিলারের বিরুদ্ধে থানার দ্বারস্থ হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। পুরসভার আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, পুরসভার দু’টি দপ্তরে ভাঙচুর চালানো হয়। আধিকারিকদের টেবিলের কাচ, চেয়ার, টেবিল ভেঙে দিয়েছেন জন প্রতিনিধিরা। এই ঘটনার পিছনে দু’টি কারণ রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। প্রথমত, বেশকিছু ওয়ার্ডে দীর্ঘদিন ধরে পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। কিন্তু পুরসভার তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ। এর ফলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। বারংবার পুরসভায় বিষয়টি জানানো সত্ত্বেও ব্যবস্থা না নেওয়ায় এদিন ক্ষোভ উগরে দেন কাউন্সিলাররা। এছাড়া দ্বিতীয় কারণ হিসেবে সামনে আসছে, এক কাউন্সিলারের বান্ধবীর কীর্তি। ওই মহিলা মেদিনীপুর পুরসভায় কর্মরত। তিনি একইসঙ্গে দু’টি দপ্তরে কর্মরত ছিলেন। দুই দপ্তর থেকেই বেতন নিতেন। বিষয়টি জানার পর একটি দপ্তর থেকে কাউন্সিলারের বান্ধবীকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এতে ক্ষুব্ধ হন ওই কাউন্সিলার। অনুমান, এদিন সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
এদিন পুরসভায় যাঁরা বিক্ষোভ দেখান তাঁদের অন্যতম পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার মৌ রায় হাজরা। তিনি জল বিভাগে ধর্নায়ও বসেন। এদিন দুপুরে মৌ দেবীর সঙ্গে মেদিনীপুর পুরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খানের সঙ্গে বচসা হয়। মৌ বলেন, ভাঙচুর কে করেছে জানা নেই। তবে আমার ওয়ার্ডে পানীয় জলের সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে না। সাধারণ মানুষ আমাকে ভুল বুঝছেন। সাধারণ মানুষের জন্যই পুরসভায় এসে প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
অপরদিকে, পুরসভায় ভাঙচুরের ঘটনায় আর এক অভিযুক্ত ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার বিশ্বনাথ পাণ্ডব বলেন, ‘অপারেশন পরিষ্কার’ শুরু হয়েছে। পুরসভা হচ্ছে দুর্নীতির আখড়া। বেআইনি নিয়োগ, উন্নয়নের টাকা সমবণ্টন না করে পক্ষপাত করা, বিভিন্ন ওয়ার্ডে জলের সমস্যা, এসব চলছেই। কিন্তু পুরসভা দায় এড়িয়ে যায়। সেই আবর্জনা আজকে পরিষ্কার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের পুরভোটে মেদিনীপুর পুরসভায় বিপুল ভোটে জেতে তৃণমূল। কিন্তু চেয়ারম্যানের পদ নিয়ে কোন্দল তৈরি হয় দলের অন্দরে। চেয়ারম্যান পদের অন্যতম দাবিদার ছিলেন শহর সভাপতি তথা কাউন্সিলার বিশ্বনাথ পাণ্ডব। কিন্তু দলের তরফে সৌমেন খানকে চেয়ারম্যান করা হয়। কিছু বছর আগেও মেদিনীপুর পুরসভার চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবি তুলে একজোট হয়েছিলেন দলেরই কাউন্সিলাররা। পুরপ্রধান সৌমেন খানকে সরাতে চেয়ে বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন তৃণমূলের ১০ কাউন্সিলার। কিন্তু বর্তমানে যা পরিস্থিতি, তাতে পুরসভার কাজের বিরোধিতা করতে উঠেপড়ে লেগেছে দলেরই এক একাংশ।
তৃণমূলের এক নেতা বলেন, আগে বিরোধিতা সামনে আসত না। এখন প্রকাশ্যেই বিরোধিতা করা হচ্ছে। এতে দলেরই ক্ষতি হচ্ছে। পুরসভায় ভাঙচুরের ঘটনা লজ্জাজনক। দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। মতবিরোধ থাকতেই পারে, তা বলে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরের ঘটনাকে সমর্থন করা যায় না। একইসঙ্গে পুরসভারও কাজের ঘাটতি রয়েছে। সেদিকেও নজর দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত চার কাউন্সিলার। এদিন পুর চেয়ারম্যান সৌমেন খান বলেন, ভাঙচুরের ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এতে পুরসভা ও দলের বদনাম হচ্ছে। জেলা বিজেপির সহ সভাপতি শঙ্কর গুছাইত বলেন, এটাই তৃণমূলের কালচার। পরিষেবা না দিয়ে উল্টে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা হচ্ছে। বিষয়টি খুবই লজ্জার। আগামী দিনে এর জবাব দেবে মেদিনীপুরের মানুষ। নিজস্ব চিত্র