• পানাগড় বিমানঘাঁটির অদূরেই হোটেল ও অনুষ্ঠান বাড়ি, বাজির শব্দে বিভ্রান্ত সেনা
    বর্তমান | ১৪ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: পানাগড় শিল্পতালুকে আসছে নানা বিনিয়োগ। ট্রেন যোগাযোগের পাশাপাশি ১৯নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে থাকা এই জনপদে বসতি গড়তে মানুষের আগ্রহ তুঙ্গে। পানাগড়ের এই নগরায়নই এখন অন্যতম উদ্বেগের কারণ বিমান বাহিনীর কাছে। বিমানঘাঁটির প্রাচীরের ওপারেই ঘন জনবসতি। সেখানে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে হোটেল ও অনুষ্ঠান বাড়ি। বিবাহ, প্রীতিভোজের অনুষ্ঠানের এলাহি আয়োজন হচ্ছে। তাতেই বাজি ফাটার বিকট শব্দ বিভ্রান্ত করছে বিমান বাহিনীর জওয়ানদেরও।

    সোমবার রাতে এমনই একটি ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিমানঘাঁটির অদূরে একটি হোটেলে বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল। সেইসময় বিপুল পরিমাণ বাজি ফাটানো হয়। বাজির তীব্রতায় বিরক্ত সেনাকর্মীরা সতর্ক করেন নাগরিকদের। বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো চর্চা শুরু হয়েছে পানাগড়ে। বর্তমান আবহে চূড়ান্ত তৎপরতা দেখাচ্ছে আমাদের বিমানবাহিনী। তাদের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, অত্যাধুনিক মিশাইল, যুদ্ধ জাহাজ পাকিস্তানের কোমড় ভেঙে দিচ্ছে। তখন বাহিনীর নিরাপত্তার স্বার্থে কেন আরও কঠোর হবে না পুলিস? সেই প্রশ্নও উঠছে।

    এসিপি সুমন জয়সওয়াল বলেন, বিমানঘাঁটি সংলগ্ন এলাকায় আমরা বাড়তি সতর্কতা নিয়ে থাকি। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছিল। যাতে বাহিনীর কাজ করতে কোনও সমস্যা না হয়, আমরা আরও সতর্ক থাকব।

    স্ট্র্যাটেজিক কারণেই দেশের স্বার্থে পানাগড়ের নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানেই রয়েছে ইস্টার্ন কমান্ডের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেনা ছাউনি। কয়েক হাজার সেনাকর্মী সেখানে রয়েছেন। রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র। দেশের পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব প্রান্তের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিশাল সেনাবাহিনীকে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য রয়েছে পানাগড় বিমানঘাঁটি। সেখানেও রয়েছে বড় ফোর্স ও গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধবিমান। সর্বক্ষণই পানাগড়ের আকাশে চক্কর কাটে বিমানবাহিনীর বিমান। এহেন গুরুত্বপূর্ণ বিমানঘাঁটিই এখন লোকালয়ের মাঝে হয়ে গিয়েছে। যা পুলিস প্রশাসনেরও মাথাব্যথার কারণ।

    বিশেষ করে, এমন পরিস্থিতিতে কয়েকদিন আগে পাশের জেলা বীরভূমে জঙ্গি ধরা পড়েছে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পূর্ব ভারতেও জঙ্গিরা যে সক্রিয় তার প্রমাণ মিলেছে। গত বছরই পানাগড় থেকে এক জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছিল বেঙ্গল এসটিএফ। সে ছিল বাংলাদেশের একটি জঙ্গি মডিউলের অন্যতম মাথা। তার বাড়ি থেকে বিমানঘাঁটির দূরত্বও মেরেকেটে এক কিলোমিটার।

    এহেন অবস্থায় দ্রুত গড়ে ওঠা জনপদই এখন নিরাপত্তার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দু’দশক আগেও পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। ছিল না কোনও শিল্পতালুক। ব্য‌বসা বলতে ছিল পুরনো গাড়ি কাটিংয়ের কারবার। বাকি অংশ ছিল গ্রামাঞ্চল। বিমানঘাঁটিটিও ছিল নির্জন এলাকায়। তখন তারও পরিকাঠামো একেবারেই ছিল না। ভাঙাচোরা রানওয়ে দেখতে মানুষ অবাধেই পৌঁছে যেত সেখানে।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)