পাতিপুকুর আন্ডারপাসের নিকাশির হাল ফেরাতে উদ্যোগ, দক্ষিণ দমদমের দায়িত্বে হলেও কাজ করছে কলকাতা পুরসভা
বর্তমান | ১৪ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ভারী বৃষ্টিতে পাতিপুকুর আন্ডারপাসে রীতিমতো ‘বুক জল’ জমে যায়। যাত্রীদের প্রায় ডুবে যাওয়া বাস থেকে বুক জল ভেঙে বেরিয়ে আসতে হয়। এমনই ছবি প্রতিবছর বর্ষাতেই দেখা যায়। সম্প্রতি পাতিপুকুর আন্ডারপাসের তেমন একটি ছবি ভাইরাল হয়েছিল সামাজিক মাধ্যমে। তারপরেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। জায়গাটি দক্ষিণ দমদম পুরসভার অন্তর্গত। কিন্তু ওই চত্বরের জমা জলের এই ভোগান্তি কীভাবে মেটানো যাবে, সেই সমস্যার সমাধানে কলকাতা পুরসভার দ্বারস্থ হয় দক্ষিণ দমদম পুরসভা। জানা গিয়েছে, দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু কলকাতার মেয়র তথা পুর ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কাছে এই সমস্যা সমাধানের অনুরোধ জানিয়েছেন।
এই পরিপ্রেক্ষিতে এবার ওই অঞ্চলের পুরনো নিকাশি নালা থেকে শুরু করে পাম্প হাউজ সংস্কারের কাজে নেমেছে কলকাতা পুরসভার নিকাশি বিভাগ। আপাতত পাইপলাইন এবং পাম্পে জমে থাকা পলি তোলার কাজ চলছে। তাতে কাজ না হলে ভবিষ্যতে পাতিপুকুর আন্ডারপাসের জমা জলের ভোগান্তির চিরস্থায়ী নিষ্পত্তি করতে বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে।
ভারী বৃষ্টিতে পাতিপুকুর আন্ডারপাসে বাস প্রায় ডুবে যাওয়া নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে ওই চত্বরের পাম্প হাউজের দায়িত্বে থাকা কেএমডিএ’কে বিশেষ পরিকল্পনা বানানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন ফিরহাদ হাকিম। কিন্তু পরবর্তীতে সেই কাজের দায়িত্ব বর্তায় কলকাতা পুরসভার নিকাশি বিভাগের উপর। পাতিপুকুর রেল ব্রিজের একটা দিক দক্ষিণ দমদম পুরসভার এবং অপর দিকটি কলকাতা পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত। তবে ব্রিজের আন্ডারপাসটি দক্ষিণ দমদম পুরসভার অধীনেই পড়ছে। বৃষ্টি হলে এমনিতেই ওই আন্ডারপাসে জল থই থই পরিস্থিতি তৈরি হয়। স্থানীয় একটি গাড়ির গ্যারাজের মালিক সুনীল সিং বলেন, রীতিমতো আতঙ্কের মধ্যে থাকি। বেশি বৃষ্টি হলেই প্রায় কোমরের উপর জল চলে আসে। খুব খারাপ পরিস্থিতি হয়।
কিন্তু কেন এই সমস্যা? জানা গিয়েছে, আন্ডারপাসের তলায় কোনও ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালা নেই। কিন্তু পাশের ফুটপাতের তলা দিয়ে একটি বড় নিকাশি পাইপলাইন রয়েছে। সেটি কলকাতা পুরসভার অন্তর্গত দত্তবাগান থেকে শুরু হয়ে পাতিপুকুর আন্ডারপাস দিয়ে সোজা লেকটাউনে খালে গিয়ে পড়েছে। ওই আন্ডারপাসের জল নামানোর জন্য একটি লিফটিং স্টেশন করে পাশেই ছোট পাম্প হাউজ রয়েছে। কিন্তু বহু বছর ধরে সংস্কার না হওয়ায় এই পাইপলাইন এবং পাম্প হাউস– দু’জায়গাতেই পলি জমে অবস্থা শোচনীয়।
কলকাতা পুরসভার নিকাশি বিভাগের বক্তব্য, ওই পাইপলাইনের প্রায় অর্ধেকের বেশি পলি জমে ভর্তি। পাশাপাশি, কেএমডিএ যে পাম্প হাউস চালায় তার সাম্পটির (কুয়ো) অবস্থাও ভালো নয়। দুই জায়গার ডিসিল্টিং বা পলিমাটি তোলার কাজ চলছে। এই প্রসঙ্গে এক আধিকারিক বলেন, মেয়র ফিরহাদ হাকিম বিষয়টি নিকাশি বিভাগের মেয়র পরিষদ তারক সিংকে দেখতে বলেছেন। কাজ করতে গিয়ে দেখা যায়, পাইপলাইনের ভিতর প্রায় তিন থেকে চার ফুট মাটি ভর্তি। জল যাবে কী করে! আমরা গোটাটাকে পরিষ্কার করছি। তারপর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হবে। যদি জমা জলের সমস্যা দূর হয়, ভালো। না হলে ভবিষ্যতে অন্য পরিকল্পনা রয়েছে। ওই আন্ডারপাসের পাশেই একটি জায়গা আছে। সেখানে একটি আলাদা লিফটিং স্টেশন তৈরি করে একটি পৃথক নিকাশি লাইন করে দেওয়া হবে। যেখান থেকে আন্ডারপাসের বৃষ্টির জল সরাসরি লেকটাউন খালে গিয়ে পড়বে। - ফাইল চিত্র