• রাতে পার্টি! দিলীপের স্ত্রী রিঙ্কুর ছেলের রহস্যমৃত্যু
    বর্তমান | ১৪ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বিধাননগর ও কলকাতা: বান্ধবী সহ ফ্ল্যাটে এসেছিলেন দুই সহকর্মী। একজন রাত ১০টায়। রাত ৩টের সময় অন্যজন। বন্ধুদের সঙ্গে রাতে পার্টিও হয়েছিল। কিন্তু, সকালে সহকর্মীরা লক্ষ্য করলেন, তাঁর শরীর অসার। ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে হাত-পা। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষ রক্ষা হল না। বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদারের একমাত্র ছেলে সৃঞ্জয় দাশগুপ্ত ওরফে প্রীতমকে (২৭) মৃত বলে ঘোষণা করল হাসপাতাল! মঙ্গলবার সকালে নিউটাউনের সাপুরজি আবাসনের এই মৃত্যু নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে। রাত সাড়ে ১২টার সময়ও ফোনে কথা হয়েছিল মায়ের সঙ্গে। সকাল ৯টাতেও নাকি নাকডাকার শব্দ পেয়েছিলেন সহকর্মীরা। তাহলে হঠাৎ কী হল? কীভাবে হল? সন্তানকে হারিয়ে শোকে ভেঙে পড়েছেন রিঙ্কুদেবী। শোকগ্রস্ত দিলীপবাবুও।

    দিলীপবাবু ও রিঙ্কুদেবীর বিয়ের এখনও একমাস পূর্ণ হয়নি। বিয়ের আগে সাপুরজি আবাসনে ছেলের সঙ্গে থাকতেন রিঙ্কুদেবী। বিয়ের পর থেকে তিনি দিলীপবাবুর বাড়িতে রয়েছেন। সৃঞ্জয় তাঁর ফ্ল্যাটে মাঝে মাঝে বন্ধুদের ডেকে পাঠাতেন। সোমবার রাতে যে দু’জন সহকর্মী তাঁর ফ্ল্যাটে এসেছিলেন, তার মধ্যে একজন তরুণীও ছিলেন। এদিন সকালে ডাকাডাকির পরেও কোনও সাড়া শব্দ না করায়, সহকর্মীরাই সৃঞ্জয়ের মাকে ফোন করেন। রিঙ্কুদেবী নিজেই গাড়ি চালিয়ে সোজা সাপুরজিতে পৌঁছে যান। তারপর সেই গাড়িতে করেই ছেলেকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই মৃত বলে ঘোষণা করা হয় সৃঞ্জয়কে। তারপর বিধাননগর মহকুমা হাসপাতাল হয়ে তাঁর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য আর জি করে পাঠানো হয়।

    বিধাননগর কমিশনারেটের এক আধিকারিক বলেন, ‘তিনি মাদকাসক্ত ছিলেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। নিয়মিত অ্যান্টি-ডিপ্রেশনের ওষুধও খেতেন’। এদিন বিকেলে আর জি করে তাঁর ময়নাতদন্ত হয়েছে। ফরেন্সিক মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক অপূর্ব বিশ্বাসের নেতৃত্বে তিনজন ময়নাতদন্ত করেন। ভিডিওগ্রাফিও করা হয়। প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে, অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিসের জেরেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। সেই সঙ্গে হৃদযন্ত্রের কোনও জটিলতাও ছিল। কার্ডিওমেগালির সমস্যা থাকতে পারে। তাতে হার্ট, লিভার বড় হয়ে যায়। এছাড়াও, ফ্যাটি লিভার ও কিডনিজনিত সমস্যা পাওয়া গিয়েছে। মৃতের ভিসেরা সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলি ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এই রোগে কি আচমকা মৃত্যু হতে পারে? সকালেও যেখানে তিনি নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছিলেন বলে দাবি সহকর্মীদের! প্রশ্ন উঠছেই।

    ঘটনায় রিঙ্কুদেবী একেবারে ভেঙে পড়েছেন। ওই অবস্থাতেই সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘রাতে পার্টি ছিল কি না, জানি না। তবে, দু’জন সহকর্মী ছিলেন। সকালে আমি ফোন পেয়েই দ্রুত গাড়ি নিয়ে পৌঁছই। দেখি, একজন ওর পায়ের তলা ঘষছে। সেন্স ফেরানোর চেষ্টা করছে। অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অপেক্ষা না করে আমিই গাড়িতে চাপিয়ে ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু, শেষ রক্ষা হয়নি।’ রিঙ্কুদেবী আরও বলেন, ‘আমাকে সোমবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ ফোনও করেছিল। এদিন ওর দুর্গাপুর যাওয়ার কথা ছিল। দেড় বছর আগে ও একবার অচেতন হয়ে গিয়েছিল। নার্ভের ওষুধ খেত।’

    বিয়ের পর পরিবর্তন হয়েছিল? উত্তরে তিনি বলেন, ‘ও আমার সঙ্গে থাকতে চেয়েছিল। মুখে বলত না। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করত না। রান্নার লোক ফিরে যেত। বন্ধুদের বলত, তোরা বাড়ি গিয়ে মা-বাবাকে দেখতে পাবি। আমার কষ্ট বুঝবি না। আপসেট থাকত।’ দিলীপবাবু বলেন, ‘ওর মা অনেক কষ্ট করে ওকে মানুষ করেছিলেন। জলজ্যান্ত ছেলেটা চলে গেল। দুর্ভাগ্য আমার। পুত্রসুখ হয়নি, পুত্রশোক হল!’
  • Link to this news (বর্তমান)