পড়াশোনা ছাড়া ফোন-ট্যাব ব্যবহার নয় প্রার্থনার লাইনে শপথ নিতে হবে পড়ুয়াদের
বর্তমান | ১৪ মে ২০২৫
অর্পণ সেনগুপ্ত, কলকাতা: ‘আমি পড়াশোনা ছাড়া কোনও কাজে বৈদ্যুতিন গ্যাজেট ব্যবহার করি না...’। স্কুলে প্রার্থনার লাইনে দাঁড়িয়ে এই শপথ নিতে হবে ছাত্রছাত্রীদের। স্কুলে স্কুলে এমনই নির্দেশ পাঠিয়েছে সেন্ট্রাল বোর্ড অব সেকেন্ডারি এডুকেশন (সিবিএসই)। মোবাইল গেমস, ওটিটি বা সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত ছাত্রসমাজকে পড়াশোনায় ফিরিয়ে আনতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় বোর্ডটি। পড়ুয়ারা যাতে আরও প্রকৃতির কাছে ফিরে যায়, সেই পরিকল্পনাও করা হয়েছে। তবে এতে কাজের কাজ কতটা হবে, উত্তর দেবে ভবিষ্যৎ!
পশ্চিমবঙ্গে ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পের অধীনে রাজ্য সরকারই একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের স্মার্ট ফোন বা ট্যাব কেনার জন্য ১০ হাজার টাকা দেয়। বহু বছর হল, বইয়ের বাইরে গিয়ে ডিজিটাল মাধ্যমেও শুরু হয়েছে পড়াশোনা। তবে কোভিডকালের আগে সরকার এই দিকে গুরুত্ব দেয়নি। অনলাইন পড়াশোনার ক্ষেত্রে সুবিধা দিতে ২০২২ সালে প্রকল্পটি চালু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের এটি দেওয়া হতো। বর্তমানে একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, পড়াশোনা ছাড়া বাকি সব কাজেই ব্যবহৃত হচ্ছে এই মোবাইল বা ট্যাব। তাঁদের বক্তব্য, মোবাইল গেমস, বিভিন্ন অনৈতিক ওয়েবসাইটে উঁকিঝুঁকি নিয়েই মেতে থাকে ছাত্রসমাজের একটা অংশ। অনেকেই তাই এই প্রকল্প বন্ধের পক্ষে। শিক্ষাদপ্তরের কর্তাদের অবশ্য দাবি, এর ইতিবাচক দিকটি নিন্দুকরা এড়িয়ে যান।
এ রাজ্যে স্মার্ট গ্যাজেটের জন্য পড়ুয়াদের টাকা দেওয়া হচ্ছে ঠিকই। তবে সরকারি অনুদানে চলা স্কুলগুলির ছাত্রছাত্রীদের হাতে মোবাইল ফোন বা ট্যাবের সংখ্যা দেশের অন্যান্য অংশের তুলনায় বেশ কম। অর্থাৎ, বৈদ্যুতিন গ্যাজেটের নেতিবাচক দিকটি শুধু বাংলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, এমন নয়। সেটাই মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে সর্বভারতীয় বোর্ডটির। সাউথ পয়েন্ট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়দেব ঘোষ বলেন, ‘সিবিএসইর এই উদ্যোগ সর্বান্তকরণে সমর্থন করি। গ্রীষ্মের ছুটির পরে প্রার্থনায় থট ফর দ্য ডে বলে একটি বিষয়ও আমরা রাখতে চলেছি। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সদর্থক ও ইতিবাচক ভাবনার প্রসারে এটি কার্যকরী হবে বলে মনে করি।’
প্রসঙ্গত, সিবিএসই ইংরেজি এবং হিন্দিতে মোট ছ’টি বাক্য প্রার্থনার সময় ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে বলাতে অনুরোধ করেছে। এক-একদিন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দু’টি বাক্য রাখা যেতে পারে। তা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনাও করতে পারবেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বাকি বাক্যগুলি হল, ‘আমি সবসময় সুখী বা খুশি’, ‘আমি শান্ত এবং যে কোনও পরিস্থিতিতে অবিচল’, ‘আমার স্মৃতিশক্তি এবং মনোসংযোগ দারুণ’, ‘আমি স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করি এবং আমার শরীর পুরোপুরি চাঙ্গা ও রোগমুক্ত’, ‘আমি সবাইকে সম্মান করি, প্রকৃতিকেও সম্মান করি’। বারবার বলা হলে এই ইতিবাচক দিকগুলি ছাত্রছাত্রীদের মানসপটে গেঁথে যাবে বলেই আশা বোর্ডের নীতি নির্ধারকদের।