• অসুস্থ সন্তানের জন্য ট্যাবলেট কিনে দেবেন? প্রতারণার নয়া ফাঁদ শহরে
    বর্তমান | ১৪ মে ২০২৫
  • স্বার্ণিক দাস, কলকাতা: পরণে ময়লা গেঞ্জি আর লুঙ্গি। বেশভূষায় অনটনের ছাপ স্পষ্ট। খোঁড়াতে খোঁড়াতে এগিয়ে এল মাঝবয়সি এক ব্যক্তি। হাতে একটি কাগজের  টুকরো। আকুতির স্বরে তার আর্জি, ‘বাবু, একটা সাহায্য করবেন… ছেলেটা খুব অসুস্থ। ডাক্তারবাবু কয়েকটা ওষুধ লিখে দিয়েছেন। কিছু ওষুধ কিনেছি। কিন্তু একটা ট্যাবলেটের দাম ৬০০ টাকা। আর এক পয়সাও নেই আমার কাছে। ওষুধটা কিনে দিলে আমার ছেলেটা বাঁচবে…।’ এরকম পরিস্থিতিতে অনেক সহৃদয় ব্যক্তি পাশে দাঁড়ান। দশ জনের কাছে আর্জি রাখলে একজন মিলেও যায়, যিনি ওষুধটি কিনে দেবেন।

    এন্টালির সুন্দরীমোহন অ্যাভিনিউয়ে লেডিস পার্কের উল্টোদিকে একটি ডায়গনস্টিক সেন্টার। তার সামনে ঘুরছে লোকটি। সঙ্গে তার স্ত্রী। প্রেসক্রিপশন দেখতে চাইলে তাও দেখাচ্ছে তারা। প্রেসক্রিপশনে রোগীর নামের জায়গায় লেখা, জামির মোল্লা। বয়স ১৫ বছর। চলতি মাসেই ডাক্তারবাবু ওই প্রেসক্রিপশন লিখেছেন। ফলে কেউ ওই ব্যক্তির আর্জি যাচাই করতে চাইলে প্রাথমিকভাবে কোনও অসঙ্গতি পাবেন না। তাই অসহায়কে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন অনেকেই। তাঁরা টের পাচ্ছেন না, পুরোটাই আসলে প্রতারণার নয়া ফাঁদ! টার্গেট মূলত ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আসা মানুষজন। কিন্তু এভাবে কাউকে ‘টোপ’ গিলিয়ে ওষুধ জোগাড় করে কী লাভ হচ্ছে প্রতারকদের? জানা গিয়েছে, কারও কিনে দেওয়া ওষুধ কিছুক্ষণের মধ্যেই পাশের দোকানে বিক্রি করে টাকা নিয়ে নিচ্ছে ওই ব্যক্তি ও তার স্ত্রী। এক-দু’দিনের বিষয় নয়, গত প্রায় আট মাস ধরে ওই ডায়গনস্টিক সেন্টারের আশপাশে এই দম্পতি ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে খবর। কিছুই কি জানে না স্থানীয় ওষুধের দোকানগুলি? নাকি নেপথ্যে রয়েছে তারাও? প্রশ্ন উঠছে। 

    কীভাবে চলছে প্রতারণা? প্রথমে ‘টার্গেট’ খুঁজে নিচ্ছে তারা। কেউ ওষুধ কিনে দিতে পারেন, সেরকম কিছু টের পেলেই আসরে হাজির হচ্ছে মহিলা সঙ্গী। অসহায় মায়ের কাতর আবেদন সহজেই বিশ্বাসযোগ্যতা পাচ্ছে। এরপর তারাই আগন্তুককে নিয়ে যাচ্ছে নির্দিষ্ট ওষুধের দোকানে। আগেভাগে দোকানে ঢুকে এগিয়ে দিচ্ছে প্রেসক্রিপশন। কোনটা চাই, জিজ্ঞেসও করছেন না দোকানদাররা। এখানেই খটকা লেগেছিল মধ্য কলকাতার বাসিন্দা শৈবাল গঙ্গোপাধ্যায়ের। তিনি বলছিলেন, ‘ওষুধ কিনে দেওয়ার আগে আমি লোকটিকে জিজ্ঞাসা করি, আপনারা কি এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারেই ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন? তাঁরা জানান, না। বাড়ি কোথায়? বলে মগরাহাট। সেখান থেকে কেউ পার্ক সার্কাসে কেন ওষুধ কিনতে বা সাহায্য চাইতে আসবে! এই সন্দেহ থেকে আমি আর ওষুধ কিনে দিতে রাজি হইনি।’ ডায়গনস্টিক সেন্টারের নিরাপত্তারক্ষীরা জানিয়েছেন, এই দম্পতি গত ৮ মাস ধরে এই এলাকায় প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই আসছে। রাত ৯টা পর্যন্ত থাকছে। ওষুধের দোকানগুলি সব জানে বলেও দাবি তাঁদের। 

    লালবাজার জানিয়েছে, এনিয়ে কোনও অভিযোগ এখনও জমা পড়েনি। এলাকাবাসীর বক্তব্য, প্রতারিতরা তো বুঝতেই পারছেন না যে তাঁদের ঠকানো হচ্ছে। তাঁরা চলে যাওয়ার পর সেই ওষুধ বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ জমা পড়বে কীভাবে!
  • Link to this news (বর্তমান)