• বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়? এখনও সম্ভাবনা দেখছে না মৌসম ভবন
    এই সময় | ১৪ মে ২০২৫
  • এই সময়: মে–র বঙ্গোপসাগর মানেই যেন মূর্তিমান আতঙ্ক। ২০২০ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত পাঁচ বছরে পাঁচটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে সমুদ্রে। তালিকার শীর্ষে অবশ্যই জায়গা পাবে ২০২০–র সুপার সাইক্লোন ‘উম্পুন’। এ ছাড়াও ২০২১–এ ‘ইয়াস’ এবং ‘তাউতে’, ২০২৩–এর ‘মোকা’ এবং ২০২৪–এর ‘রেমাল’–এর স্মৃতি এখনও টাটকা। ২০২৫–এর বঙ্গোপসাগর নিয়ে এখনও পর্যন্ত মৌসম ভবন কোনও ‘গোলমেলে’ পূর্বাভাস দেয়নি।

    তবে ক্যানাডার স্যাসিকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিজ্ঞান বিভাগের গবেষক, বাংলাদেশের মুস্তাফা কামাল পলাশের একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ঘিরে তৈরি হয়েছে চাঞ্চল্য। পলাশের পূর্বাভাস, বঙ্গোপসাগরে ২৩ থেকে ২৮ মে–র মধ্যে তৈরি হতে চলেছে একটি ঘূর্ণিঝড়। ওই ঝড়টি ওডিশা থেকে মিয়ানমারের মধ্যে কোনও জায়গা দিয়ে ল্যান্ডফল করতে চলেছে — এমনটাই পূর্বাভাস বাংলাদেশের ওই গবেষকের।

    ঘূর্ণিঝড় নিয়ে মুস্তাফা কামাল পলাশের এটাই প্রথম ভবিষ্যদ্বাণী নয়। ২০২৩–এ মৌসম ভবন কোনও পূর্বাভাস দেওয়ার আগে তিনিই প্রথম জানিয়েছিলেন, বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় আসতে চলেছে। সে বার সত্যিই ঝড় এসেছিল। ৯ মে আন্দামান সাগরে তৈরি হয়েছিল সাইক্লোন ‘মোকা’। পরে অবশ্য ঘূর্ণিঝড় নিয়ে তাঁর একটি পূর্বাভাস শেষ পর্যন্ত মেলেনি। সে যতই হোক, একে তো মাসটা মে তার উপর অতীতে একবার হলেও ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস মিলিয়ে দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে পলাশের। তাই, তাঁর এ বারের পূর্বাভাস যথেষ্ট ট্রেন্ডিং সোশ্যাল মিডিয়ায়। ২০২৩–এর মতো এ বারও কি মিলতে চলেছে তাঁর পূর্বাভাস? সত্যিই যদি শেষ পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়, তা হলে তার নাম দেওয়া হবে ‘শক্তি’। এই নাম শ্রীলঙ্কার দেওয়া।

    এই প্রসঙ্গে মৌসম ভবনের আবহবিদরা বলছেন, ‘বঙ্গোপসাগরে মে মাসটি ঘূর্ণিঝড়–প্রবণ (সাইক্লোন প্রোন)। আমাদের নজর সব সময়েই বঙ্গোপসাগরের উপরে থাকে। তবে এ বার এখনও পর্যন্ত সমুদ্রের অস্থির হওয়ার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি।’ একই সঙ্গে মৌসম ভবন মঙ্গলবার জানিয়েছে, জলীয় বাষ্পে পরিপূর্ণ দক্ষিণ–পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর একটি শাখা ইতিমধ্যেই নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত এসে পড়েছে। ওই অঞ্চলে তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আগামী চার দিনের মধ্যে গোটা আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বর্ষা নামবে।

    পুনের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মিটিওরোলজির প্রাক্তন জলবায়ু বিজ্ঞানী এবং সংস্থার সাইক্লোন মডেল নির্মাতাদের অন্যতম পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় অবশ্য মনে করেন বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরির সম্ভাবনা একেবারেই দুর্বল করে দিয়েছে দক্ষিণ–পশ্চিম মৌসুমি বায়ু। তিনি বলেন, ‘ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর মিডিয়াম রেঞ্জ ওয়েদার ফোরকাস্ট–এর (ইসিএমআরডব্লিউএফ) তৈরি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ফোরকাস্ট সিস্টেম (এআইএফএস) কয়েক দিন আগেও বঙ্গোপসাগরের অস্থির হয়ে ওঠার লক্ষণ দেখাচ্ছিল। তবে এখন আর তেমন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে না।’ ওই জলবায়ু বিজ্ঞানী বলছেন, ‘সমুদ্রে সাইক্লোন তৈরি হওয়ার প্রথম শর্ত হলো সমুদ্রের উপরিতলের তাপমাত্রাকে অন্তত ২৮–৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকতে হয়। কিন্তু, সমুদ্রে বর্ষা শুরু হয়ে যাওয়ায় জল ঠান্ডা হয়ে যাবে।’ তিনি জানিয়েছেন, আবহাওয়া বিজ্ঞানের পুরোনো প্রবাদ ‘হোয়াইল মনসুন অ্যারাভস, সাইক্লোন ডিপার্টস’ — বর্ষায় ঘূর্ণিঝড়ের বিদায়বার্তা।

    তবু সমুদ্রের উপর থেকে নজর সরছে না আবহবিদদের। মাসটা যে মে। তাই সাবধানের মার নেই।

  • Link to this news (এই সময়)