• মোদীর ঢালাও প্রশংসা শতাব্দীর, অন্য সুর কাকলি কল্যাণদের
    এই সময় | ১৪ মে ২০২৫
  • এই সময়: দলের অন্য কয়েক জনের যা অবস্থান, তার থেকে অনেকটাই ভিন্ন পথে হেঁটে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়।

    বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের বলেন, ‘মোদীজি এমনিতে ক্যালকুলেটিভ। কোথায় ইমোশান কাজ করবে, কোথায় মানুষ অ্যাটাচ্‌ড হবে, তা উনি ভালো বোঝেন। সিঁদুর শব্দ খুব অর্থবহ। যেহেতু সব অর্থে সিঁদুরকে শেষ করা হয়েছে, সেখানে অপারেশন সিঁদুর (নামকরণ), মহিলাদের দিয়ে সেই অপারেশনের (ব্রিফিং) করানো— একটা কনসেপ্ট–এ তৈরি করা হয়েছে।’ তৃণমূল সাংসদ শতাব্দীর কথায়, ‘যুদ্ধের সঙ্গে (উনি) ইমোশানকে জুড়েছেন। মানুষ এতে অনেক বেশি সাহস পেয়েছে। সিঁদুর আমাদের আবেগের সঙ্গে, আমাদের সমাজের সঙ্গে, সম্পর্কের সঙ্গে কী ভাবে যুক্ত, তা আবার প্রমাণিত হলো।’

    পহেলগামে জঙ্গি হামলার প্রত্যাঘাত হিসেবে পাক অধিকৃত কাশ্মীর ও পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে ভারতের সামরিক অভিযান নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। অপারেশন সিঁদুর শুরু হওয়ার পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স হ্যান্ডলে লিখেছিলেন, ‘জয় হিন্দ, জয় ইন্ডিয়া’। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতীয় সেনাকে স্যালুট জানিয়ে লেখেন, ‘সন্ত্রাসবাদের কাঠামোকে ধ্বংস করা হয়েছে। এটাই ইন্ডিয়ার শক্তি।’ সন্ত্রাসবাদকে শেষ করে স্থায়ী শান্তির জন্য জঙ্গিদের মদতদাতাদের নির্মূল করার পক্ষেও সওয়াল করেন অভিষেক। তা ছাড়া, ওই অভিযান শুরু হওয়ার অব্যবহিত পরেই তৃণমূল–সহ বিরোধী দলগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছিল এবং এটা যে রাজনীতির সময় নয়, বরং গোটা দেশের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময়, সে বার্তাও দিয়েছিল।

    কিন্তু গত শনিবার, ১০ মে বিকেলে ইউএস প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সবার আগে ভারত–পাকিস্তান সংঘর্ষ বিরতির কথা ঘোষণা করার পর পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টায়। শুধু তা–ই নয়, ট্রাম্প জানান, তাঁর মধ্যস্থতাতেই দুই প্রতিবেশী দেশ সংঘর্ষ বিরতিতে রাজি হয়েছে। আমেরিকার ‘দাদাগিরি’ এ ভাবে ভারতের ‘মেনে নেওয়া’–কে কটাক্ষ করে নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন তৃণমূলের অনেকে।

    বারাসতের তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার প্রাক্তন দুই প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও অটলবিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে ওই দু’জনের সঙ্গে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর তুলনা করে লিখেছেন, ‘তাঁরাও দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। যুদ্ধ থেকে নির্বাচনী ফায়দা তোলা তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল না। ডঙ্কাপতি মোদীজি প্রচারমন্ত্রী, তাই ৪৮ ঘণ্টার মার্কিন চাপেই জেতা যুদ্ধ ছেড়ে চলে এলেন।’ লোকসভায় তৃণমূলের সচেতক, শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার বলেন, ‘ইন্দিরা গান্ধী, পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু, লালবাহাদুর শাস্ত্রী, এমনকী অটলবিহারী বাজপেয়ীর মতো ব্যক্তিত্ব এখন মিসিং। ওঁরা দেশকে অগ্রাধিকার দিতে চেয়েছিলেন। ওঁরা কেউ বিশ্বগুরু হতে চাননি।’ নাম না–করলেও কল্যাণের কটাক্ষের নিশানায় যে নমো, তৃণমূলের অনেকেই সেটা মনে করছেন।

    উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক প্রশ্ন তুলেছেন। যেমন, ‘জঙ্গিদের ও তাদের মদতদাতাদের বাগে পেয়েও কার অঙ্গুলি হেলনে আমরা থমকে দাঁড়ালাম? ১৯৭১ সালে তো আমরা কারও দাদাগিরি মানিনি?’ ফেসবুকে উদয়নের আরও প্রশ্ন, ‘দেশবাসী কি কয়েকটি জঙ্গিঘাঁটি এবং পাক এয়ারবেস ধ্বংস করেই সন্তুষ্ট? এটাই কি মায়ের সিঁথির সিঁদুরের দাম?’

    অপারেশন সিঁদুর শুরু হওয়ার পর সাগরিকা ঘোষ–ই প্রথম তৃণমূল সাংসদ, যিনি ইন্দিরা গান্ধীর ছবি এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে লিখেছিলেন, ‘দেশের সব চেয়ে শক্তিশালী প্রধানমন্ত্রী।’ একই বক্তব্যের প্রতিফলন দেখা গিয়েছে তৃণমূলের নবীন প্রজন্মের নেতাদের কারও কারও কথাতেও। তৃণমূলের আইটি সেলের ইন–চার্জ দেবাংশু ভট্টাচার্য ইন্দিরা গান্ধীর ছবি পোস্ট করে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আপনি এক ও অদ্বিতীয়। না আপনার মতো কেউ এসেছে, না আপনার মতো কেউ আসবে। এক হাজার বছরেও নয়।’

    ঠিক এই অবস্থাতেই মঙ্গলবার শতাব্দীর মুখে মোদীর ঢালাও প্রশংসা তৃণমূলেরই কারও কারও কাছে বেসুরো লেগেছে। তবে দলের তরফে এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি।

  • Link to this news (এই সময়)