• জীবনযুদ্ধের কঠিন লড়াই সামলেও পরীক্ষায় সফল
    এই সময় | ১৪ মে ২০২৫
  • এই সময়: লড়াইটায় শেষ পর্যন্ত জিতে গেল ওরা। কেউ জিতেছে রোগের বিরুদ্ধে লড়ে, কেউ মনের সঙ্গে লড়াই করে, কেউ মা–কে হারানোর পরেও মন শক্ত রেখে ডুব দিয়েছিল পড়াশোনায়। সিবিএসই রেজাল্ট বেরোতে দেখা গেল, ওরা সবাই জিতে গিয়েছে।

    ভারতীয় বিদ্যাভবন স্কুলের পড়ুয়া সল্টলেকের অপ্রমিত ভট্টাচার্য হিউম্যানিটিজ়ে ক্লাস টুয়েলভ পাশ করল। অপ্রমিত যখন ক্লাস সেভেনে পড়ত, তখনই ধরা পড়ে ব্লাড ক্যান্সার। ৮ মাস হাসপাতালে থেকে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছিল। চিকিৎসা চলতে চলতেই আবার শুরু হয় করোনা অতিমারী। অপ্রমিত ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হয়। ক্লাস টেনে প্রায় ৮৪ পার্সেন্ট নম্বরও পেয়েছিল সে।

    কিন্তু ক্রমশ বদলে যেতে থাকে ছেলেটা। পড়াশোনা করতে চায় না, স্কুলে যেতে চায় না। অপ্রমিতের বাবা তমাল ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টারের বিজ্ঞানী, মা অপর্ণা শিক্ষিকা। বাবা–মায়ের কাছেও সে পড়বে না কিছুতেই। মনোবিদদের সাহায্য নেওয়া হয়। তার পরেও পরীক্ষায় বসবে না–বলেই ঠিক করে ফেলেছিল।

    অপর্ণা বলেন, ‘পরীক্ষার আগে যেন গা ছেড়ে দিয়েছিল। আমি ধন্যবাদ জানাই স্কুলের প্রিন্সিপাল এবং ক্লাস টিচারকে। ক্লাস টিচারের একটা কথায় ও পরীক্ষায় বসার সিদ্ধান্ত নেয়। তিনি বলেছিলেন, জলে যখন ঝাঁপ দিয়েছ, সাঁতার তোমাকে কাটতেই হবে।’ দ্বাদশে মোট ৭১ পার্সেন্ট নম্বর পেয়েছে অপ্রমিত। এ বার সে বলছে, ‘কর্পোরেট ল নিয়ে কেরিয়ার করতে চাই। তাই সেন্ট জেভিয়ার্স ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি।’

    অভিনব ভারতী স্কুলের লক্ষ্য আগরওয়ালের লড়াইটাও ছিল রোগের বিরুদ্ধে। তাও আবার পরীক্ষার ঠিক এক মাস আগে ধরা পড়ে আইবিএস। পেট ব্যথায় কুঁকড়ে গিয়েছিল ছেলেটা। বিহারে পরিবার থাকলেও লক্ষ্য কলকাতার ভবানীপুরে মেসে থেকে পড়াশোনা করত। লক্ষ্যের কথায়, ‘শরীর সব সময়ে খারাপ থাকত। ভেলোরে গিয়েও চিকিৎসা করাই। লাভ হয়নি। অবশেষে কলকাতাতেই চিকিৎসা হয়।’ এখনও চিকিৎসা চলছে। কমার্সে প্রায় ৮০ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করে এখন লক্ষ্যর লক্ষ্য—হোটেল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা করার। স্বপ্ন কোনও বড় শহরে নিজের একটা হোটেল হবে!

    ডিপিএস রুবিপার্কের দ্বাদশের ছাত্রী স্বর্ণালি সোম মাকে হারায় গত বছরের জুনে। উত্তর ভারতে বেড়াতে গিয়ে আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। স্বর্ণালি জানায়, স্কুল, বন্ধুরা ও শিক্ষকরা ভীষণভাবে মানসিক সাপোর্ট দিয়েছে তাকে। দুঃখ থেকে মন সরাতে পড়াশোনায় ডুবিয়ে দেয় নিজেকে। মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্বর্ণালি আগের চেয়েও বেশি মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করেছে। তার সেই পরিশ্রমের ফল মিলেছে বোর্ডের রেজাল্টে। এ ভাবেই লক্ষ্য, অপ্রমিত, স্বর্ণালিরা জিতে গিয়েছে প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে।

  • Link to this news (এই সময়)