• পুত্রসুখ হল না, পুত্রশোক হল: দিলীপ! স্ত্রী রিঙ্কুর আক্ষেপ, তাঁর বিয়ের পর খানিক মনমরা হয়ে পড়েছিলেন একমাত্র পুত্র সৃঞ্জয়
    আনন্দবাজার | ১৪ মে ২০২৫
  • বছর পঁচিশের ছেলের মৃত্যুতে হতবাক, বিধ্বস্ত, ব্যাকুল মা রিঙ্কু মজুমদার। তিনি জানাচ্ছেন, দিলীপ ঘোষের সঙ্গে তাঁর বিয়ের পর পুত্র সৃঞ্জয় দাশগুপ্ত দেখানোর চেষ্টা করতেন যে, তিনি খুশি। কিন্তু আদতে মনমরা ছিলেন। কারণ, ছেলের ইচ্ছা ছিল, তাঁর সঙ্গে থাকবেন। সেই নিয়ে দিলীপের সঙ্গে কথাবার্তাও বলতে চেয়েছিলেন রিঙ্কু। কিন্তু সেই সময়টা পেলেন না। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিমতলা শ্মশানে সৃঞ্জয়ের দেহের সামনে দাঁড়িয়ে বিজেপি নেতা দিলীপের আক্ষেপ, ‘‘পুত্রসুখ হল না, পুত্রশোক পেলাম।’’

    মঙ্গলবার সকালে নিউটাউনের আবাসন থেকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় দিলীপের স্ত্রী রিঙ্কুর পুত্র সৃঞ্জয়কে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানান, সৃঞ্জয় মারা গিয়েছেন! ছেলের মৃত্যুতে মর্মাহত মা বলেন, ‘‘আমার বিয়ের পর ও ‘আপসেট’ থাকত। মনখারাপ ছিল ওর। আমাকে বলত না। কিন্তু বুঝতে পেরেছিলাম...।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি সবে ডিসাইড (সিদ্ধান্ত) করেছিলাম ওঁর (দিলীপ) সঙ্গে কথা বলব। উনি ব্যস্ত ছিলেন। আমি এটাই বলতাম যে, ‘দেখো, ছেলেকে আমার কাছে নিয়ে আসব। না-হলে আমি ছেলের কাছে গিয়ে থাকব।’ কথাবার্তা হচ্ছিলও। উনি বলেছিলেন, ‘ওকে একটু অভ্যস্ত হতে দাও। ও যদি বাইরে চাকরি করত, তখন তো বাইরে থাকতে হত।’ তবে আমি বুঝতে পেরেছিলাম, ছেলের ঠিক যত্ন হচ্ছে না। মনটা ওর ঠিকঠাক ছিল না। আমি মা তো!’’

    দিলীপের সঙ্গে বিজেপি নেত্রী রিঙ্কুর বিয়ে হয় গত ১৮ এপ্রিল। রিঙ্কুর আগের পক্ষের একমাত্র সন্তান সৃঞ্জয় ছিলেন পেশায় আইটি কর্মী। বিয়ের ২৫ দিনের মাথায় ছেলের আচমকা মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন রিঙ্কু। বিধ্বস্ত দিলীপও। বিজেপি নেতা বলেন, ‘‘আমি বুঝতে পারছি না, কী হল! ওর মা সকালে রান্না করছিল। তার পর একটা ফোন এল। ও (রিঙ্কু) দৌড়ে চলে এল। আমি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘পোস্টমর্টেম হবে। জানা যাবে, কী হল, কী করে জলজ্যান্ত একটা ছেলে আমাদের সকলকে ছেড়ে চলে গেল!’’ দিলীপের সংযোজন, ‘‘মায়ের সব কিছু ছিল ছেলে। অনেক কষ্টে ওকে মানুষ করেছে। ছেলেও সর্বগুণসম্পন্ন। পড়াশোনায় ভাল। দেখতে-শুনতে ভাল। ভাল কথা বলে।’’ একটু থামেন দিলীপ। এর পরে বলেন, ‘‘কখনও ভাবিনি এমন কিছু হতে পারে...দুর্ভাগ্য আমার। পুত্রসুখ হয়নি। পুত্রশোক হল। কল্পনা করিনি।’’

    দিলীপ আরও জানান, বিয়ের অনেক আগে থেকেই রিঙ্কুর পুত্রের সঙ্গে তাঁর আলাপ-পরিচয়। খেলা দেখতে গিয়েছেন একসঙ্গে। ভাল সম্পর্ক ছিল তাঁদের। পুত্রহারা রিঙ্কু জানান, আবাসনে দুই বন্ধুর সঙ্গে থাকতেন ছেলে। ছেলের বান্ধবীর কাছ থেকে মঙ্গলবার সকালে ফোন পেয়ে তাঁর ফ্ল্যাটে যান। রিঙ্কু বলেন, ‘‘সোমবার ওর অফিসের দু’জন কলিগ এসেছিলেন। এক জন রাত ১০টায় এসেছিলেন। এক জন রাত ৩টেয় এসেছিলেন। রাত ১২টা নাগাদ আমার সঙ্গে কথা হয়েছিল। বলেছিল, ‘আগামিকাল দুর্গাপুর যাব। সকাল ৮টায় সায়েন্স সিটি যাব।’’’ তিনি জানান, স্নায়ুর অসুখ ছিল ছেলের। এক-দেড় বছর আগে এক বার সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছিলেন সৃঞ্জয়। তখন থেকে ওষুধ খেতে হত। তবে কয়েক দিন ওষুধ খাচ্ছিলেন না ছেলে। মায়ের কথায়, ‘‘মুখে বলত না কিছু। বোধ হয়, স্বপ্ন ছিল আমার সঙ্গে থাকবে। আমি বলেছিলাম, ‘তোকে শীঘ্রই নিয়ে আসব আমার কাছে। তুই আসবি, তার পর ঘর করব। একসঙ্গে থাকব।’ তবে দু’দিন টেনশনে ছিলাম। ও ঠিক করে খাওয়া-দাওয়া করছিল না। আমি এখানে রান্নাবান্না করছি। ছেলে যেখানে থাকে, রান্না করার লোক ফিরে চলে যাচ্ছে। একদিনও যে ছেলে বাড়ির বাইরে থাকত না, সেই ছেলে বন্ধুদের ফ্ল্যাটে থাকা শুরু করেছিল।’’ রিঙ্কু জানান, তিনি নিউটাউনের আবাসনে গিয়ে দেখেন, ছেলের দু’জন কলিগ সেখানে রয়েছেন। তাঁদের তিনি চিনতেন। মহিলার কথায়, ‘‘ও (সৃঞ্জয়) কলিগদের বলত, ‘তোরা তো মা-বাবার সঙ্গে থাকিস। বুঝবি না।’ আবার কখনও বলত, ‘আমি হ্যাপি।’ কী যে হল কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।’’ এখন ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় ঘোষ এবং দাশগুপ্ত পরিবার।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)