সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাম মিছিলে ভিড়, আগুন জ্বেলে বিক্ষোভে বিজেপি
আনন্দবাজার | ১৪ মে ২০২৫
সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করা এবং যুদ্ধ-জিগির তুলে বিভাজনের চেষ্টা বন্ধের দাবিতে একসঙ্গে পথে নামল ১০টি বামপন্থী দল। জনতার ঐক্য গড়ে সন্ত্রাসবাদের ভাবনাকে বিচ্ছিন্ন করার ডাক দেওয়া হল মিছিল থেকে। যুদ্ধ-উন্মাদনার আবহে সেই মিছিল ভিড় টানল চোখে পড়ার মতোই। আর তার পরেই রাস্তায় আগুন জ্বেলে বামেদের শান্তির বার্তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নেমে পড়ল বিজেপি!
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার দাবিতে এবং যুদ্ধ-জিগির ও সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতায় ধর্মতলা থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত মিছিলের ডাক দিয়েছিল বামপন্থী দলগুলি। কলকাতায় মঙ্গলবারের মিছিলে শামিল হয়েছিলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিএমের মহম্মদ সেলিম, সূর্যকান্ত মিশ্র, শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, রামচন্দ্র ডোম, সিপিআইয়ের স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, গৌতম রায়স, আরএসপি-র দেবাশিস মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। ছিলেন এসইউসি-র চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য, তরুণকান্তি নস্কর, সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের কার্তিক পালেরাও। তাঁরা সমবেত ভাবে আহ্বান জানিয়েছেন, যুদ্ধের নামে উন্মাদনা তৈরি করে দেশের মধ্যে যে ভাবে বিভাজন তৈরির চেষ্টা হচ্ছে, তাকে রুখতে হবে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিমের বক্তব্য, ‘‘পহেলগামে হামলাকারী সন্ত্রাসবাদীদের উদ্দেশ্য ছিল বিভাজন। তা হলে আরএসএস বা হিন্দুত্ববাদীরা যে বিভাজনের রাজনীতি করছে, তাতে কার হাত শক্ত হচ্ছে? সে কারণেই আমরা জনতার ঐক্যের কথা বলছি।’’
মিছিল শেযে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান যুদ্ধ-উন্মাদনা ও অসত্য প্রচারের জন্য সংবাদমাধ্যমের একাংশের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। সেলিম বলেছেন, ‘‘নতুন দেশপ্রেমের পাঠ শেখাচ্ছে এক দল! ঐক্যের কথা বললেই আক্রমণ করা হচ্ছে। এখন তো প্রধানমন্ত্রীকে বলতে হচ্ছে, ঐক্য প্রয়োজন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘অনেকে বলছেন শান্তির কথা, ঐক্যের কথা বলা যাবে না। ভারতীয় সভ্যতা গোটা বিশ্বকে শান্তির কথা বলেছে। সেটাই আমাদের শক্তি। সন্ত্রাসবাদ শান্তিকে বিঘ্নিত করতে চাইছে। যারা বলছে, শান্তির কথা বলবেন না, তারা তো সন্ত্রাসবাদের দোসর!’’ বাম নেতৃত্বের বক্তব্য, বেকার যুবক, খেতমজুর বা শ্রমিক— কারও সমস্যাই আর সামনে আসে না, যখন অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে।
বিজেপি অবশ্য এ সব যুক্তিতে কর্ণপাত করতে নারাজ। যুদ্ধ-জিগির ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বামেদের মিছিলের পাল্টা রাস্তায় নেমেছে তারা। আগের দিন শহরে শান্তি-মিছিলে চড়াও হওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তাদের বিরুদ্ধে। তেমন কিছু অবশ্য এ দিন ঘটেনি। তবে বামেদের মিছিল ধর্মতলা ছেড়ে শিয়ালদহের দিকে এগোনো মাত্রই রাস্তায় নেমেছিলেন বিজেপির উত্তর কলকাতা সাংগঠনিক জেলার কর্মী-সমর্থকেরা। জেলা সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষ, পুর-প্রতিনিধি সজল ঘোষেদের নেতৃত্বে বিজেপি কর্মীরা রাস্তা অবরোধ করে, আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান। বামেদের ‘পাকিস্তানপন্থী’ বলে আক্রমণ করেছেন তাঁরা।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা এবং সম্প্রীতির দাবিতে আমরা রাস্তায় নেমেছি। তাতে বিজেপির গায়ে ফোস্কা পড়ছে কেন? সংঘর্ষ-বিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী, তার আগে ঘোষণা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিজেপি কি মোদী, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের হিম্মত দেখাবে?’’