• পাওয়ার লিফটিং-এ দেশের জন্য রুপো আনল স্নেহা
    এই সময় | ১৪ মে ২০২৫
  • আর্থিক সমস্যায় প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়াই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। তবে দেরাদুনে এশিয়ান পাওয়ার লিফটিং চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৭৬ কেজির জুনিয়র বিভাগে শারীরিক ভাবে অত্যন্ত সক্ষম ও সুপ্রশিক্ষিত রুশ প্রতিযোগীর সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয় স্থান পেয়ে দেশের তথা রাজ্যের মানরক্ষা করল বালির স্নেহা ঘরামি। দরিদ্র, দিন আনা-দিন-খাওয়া পরিবারের মেয়ে স্নেহাকে ছোট থেকেই তীব্র অভাবের বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে।

    আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া তার কাছে বিলাসিতা, এমন মতও পোষণ করেছেন অনেকেই। সেটাও এক ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছিল স্নেহার কাছে। তবু নিজের মনের জোর ও শুভানুধ্যায়ীদের সাহায্য নিয়ে এ বারও জেতার জেদ বজায় রেখেই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেরাদুনে পৌঁছয় স্নেহা। শেষমেশ রাজ্যের ও দেশের সম্মান রক্ষা করে খুশি অষ্টাদশী স্নেহা। ৬-১২ মে দেরাদুনে ওই প্রতিযোগিতায় রাশিয়ার এক প্রতিযোগী মুখুৎদিনোভা লুলিয়া প্রথম ও কাজাখস্তানের প্রতিযোগী গ্রাস রেজিনা তৃতীয় স্থান পেয়েছে। স্নেহা ৭৬ কেজি জুনিয়র বিভাগে ৩টি ইভেন্টে রুপো ও একটিতে ব্রোঞ্জ পেয়ে গ্রুপে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে।

    বালির ঘোষপাড়ার বাসিন্দা স্নেহার সাফল্যের পিছনে রয়েছে তার অদম্য ইচ্ছেশক্তি, কঠোর পরিশ্রম ও অনুশীলন এবং নিজের যোগ্যতাকে প্রতিদিন বাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। ছোট থেকেই বালি দেওয়ানগাজী রোডের বালি হেলথ সেন্টারে প্রশিক্ষক জয়ন্ত ভট্টাচার্যের তত্ত্বাবধানে অনুশীলন করে নিজেকে তৈরি করেছে স্নেহা। এর আগেও রাজ্যস্তরে ও জাতীয় ক্ষেত্রে বহু প্রতিযোগিতার মঞ্চে নিজেকে প্রমাণ করেছে বালির এই মেয়ে। স্নেহা ২০২৪-এ দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ফেডারেশন কাপ-এ প্রথম স্থান অর্জন করেছিল। এই বছরেই নেতাজি সুভাষ স্টেট গেমসে রাজ্যে ৭৬ কেজি জুনিয়র বিভাগে প্রথম হয়েছে।

    স্নেহার প্রশিক্ষক জয়ন্ত ভট্টাচার্য বলেন, 'দেরাদুনে রুশ প্রতিযোগীর সঙ্গে স্নেহাকে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছে। ওরা পরিকাঠামো থেকে শুরু করে সঠিক পুষ্টিকর খাবার ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা যা পেয়ে থাকে, আমাদের মেয়েদের তা দিতে পারি কোথায়? তাতেও স্নেহা যা পারফর্ম্যান্স দেখাতে পেরেছে, তা যথেষ্ট প্রশংসাযোগ্য।' ঘরে অভাব সত্ত্বেও স্নেহার পরিবারও তার সঙ্গে থেকেছে সব সময়ে। ধীরে ধীরে জেলা হয়ে রাজ্য, জাতীয়, আন্তর্জাতিক স্তরের নানা প্রতিযোগিতায় সাফল্য পেয়েছে স্নেহা। স্নেহার পরিবার আর্থিক দিক থেকে অত্যন্ত দুর্বল। বাবা উত্তম ঘরামি নিজের ঠেলা গাড়িতে নানা জায়গায় ঘুরে ফল বিক্রি করেন।

    পরিবারের এই দৈন্যের মধ্যেও স্নেহাকে শক্তি-উত্তোলনের মতো কঠিন খেলায় অংশ নেওয়ার জন্য নিজেদের সাধ্যের বেশি যত্ন নিয়েছেন তাঁরা। বছরভর মেয়ের প্রশিক্ষণের খরচ সামলাতেই হিমসিম খেয়ে যান বাবা-মা। তারই মধ্যে নিজের উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে স্নেহা এখন হুগলির শ্রীরামপুর কলেজে প্রথম বর্ষে পড়াশোনাও করছে। এ বার প্রতিযোগিতায় যাওয়ার ক্ষেত্রেও স্নেহার আর্থিক বাধার কথা জেনে অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁদের অন্যতম হাওড়া জেলা তৃণমূল যুব সভাপতি কৈলাস মিশ্র। স্নেহার দ্বিতীয় স্থান পাওয়ার খবরে উল্লসিত হয়ে স্নেহাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি।

  • Link to this news (এই সময়)