অতুলচন্দ্র নাগ, ডোমকল: জাল আধার কার্ড তৈরির বড়সড় চক্রের পর্দাফাঁস। জাল কার্ড পিছু ঘুষ দেওয়ার টোপ দিয়ে স্থানীয়দের বাড়িতে বসে জাল আধার কার্ড তৈরি করা হচ্ছিল মুর্শিদাবাদের রানিনগরের কদমতলায়। এই চক্রের তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। উদ্ধার হয়েছে একাধিক যন্ত্রপাতি। তদন্তকারীদের আশঙ্কা, আধার হাত করেই নিরাপত্তায় সিঁদ কাটার চক্রান্ত করছে জঙ্গিরা। তাই অপারেশন সিঁদুর আবহে এই চক্র ফাঁস বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
সূত্র মারফত খবর মেলে, কদমতলায় মহম্মদ জামালউদ্দিনের বাড়িতে জাল আধার কার্ড তৈরির অবৈধ চক্র চলছিল। খবর পাওয়ামাত্র জামালউদ্দিন শেখের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। ধৃতদের নাম মহম্মদ জামালউদ্দিন শেখ, বয়স ৩৬ বছর, বাড়ি কদমতলায়। বাকি ধৃতরা হল মৃদাদপুরের বাসিন্দা ২৪ বছরের আবু সুফিয়ান, বংশীবদনপুরের ৩২ বছরের রফিকুল ইসলাম। জানা গিয়েছে, অভিযুক্তরা দীর্ঘদিন ধরেই এই চক্রের সঙ্গে জড়িত। চক্রের মূল পাণ্ডা রফিকুল ও সুফিয়ান। তারাই জাল আধার কার্ড বানানোর যাবতীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ করে কার্ড বানাত। কখনওই একই জায়গায় তারা বেশিদিন ওই কাজ করত না। ধৃতদের কাছ থেকে ২টি প্রিন্টার, ১টি ল্যাপটপ, ১টি ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার, ১টি রেটিনা স্ক্যানিং মেশিন, ১টি ক্যামেরা উদ্ধার হয়েছে। মিলেছে নগদ ৮ হাজার ৫০০ টাকা ও পাঁচটি জাল আধারকার্ড।
কদমতলার বাসিন্দা কাতলামারী ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সদস্য বাগবুল ইসলাম জানান, “জামালউদ্দিনের যা বিদ্যেবুদ্ধি তাতে জাল আধার কার্ড তৈরি তার কর্ম নয়। জামালউদ্দিন, আবু সুফিয়ান ও রফিকুল ইসলামের পূর্বপরিচিত। জামালের বাড়িতে বসে আধার কার্ড তৈরির কাজ করবে এবং কার্ড পিছু ৫০ করে টাকা দেবে বলেও চুক্তি হয় তাদের মধ্যে। টাকার লোভে জামালউদ্দিন তার বাড়িতে আধার কার্ডের কাজ করার অনুমতি দেয়। আর তার জেরে সেও আজ দোষী।” পুলিশ জানতে পেরেছে আধার কার্ড তৈরির জন্য এলাকাবাসীর কাছ থেকে বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করছিল ওই চক্র। যা বিভিন্ন বেআইনি কাজে ব্যবহার করত বলে অভিযোগ। তদন্তকারীদের সন্দেহ, ধৃতরা টাকার বিনিময়ে হয়তো বাংলাদেশি নাগরিকদেরও আধার কার্ড বানিয়ে দিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে পুলিশ। জানা গিয়েছ, সরকার অনুমোদিত কেন্দ্র থেকে আধার কার্ড বানাতে প্রয়োজনে ৫০-৬০ টাকা লাগে। কিন্তু রফিকুল ইসলামরা কার্ড পিছু ৫০০-৬০০ টাকা নিত।
ডোমকলের এসডিপিও শুভম বাজাজ জানান, “এই ঘটনার পিছনে আরও কারা জড়িত আছে, কতদিন ধরে একাজ করছে, কতগুলো অবৈধ আধার কার্ড তৈরি করেছে, এদের পিছনে আর কারা রয়েছে, এসব জানতে ধৃতদের আদালতে তুলে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।”