সৃঞ্জয়ের মৃত্যুর পর নেশা নিয়ে যুবসমাজকে সতর্কবার্তা দিলীপ ঘোষের
দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৫ মে ২০২৫
দিলীপ জায়া রিঙ্কু মজুমদারের প্রথম পক্ষের ছেলের রহস্য মৃত্যু নিয়ে একাধিক সংশয় তৈরি হয়। বিভিন্ন রকম প্রশ্ন দানা বাঁধে। অবশেষে ২৫ বছর বয়সী সৃঞ্জয় ওরফে প্রীতম দাশগুপ্তের দেহ উদ্ধারের প্রায় ৮ ঘন্টা পর ময়না তদন্তের রিপোর্ট সামনে এলো। সেই রিপোর্টে জানা গিয়েছে, এই মৃত্যুতে কোনও ‘ফাউল প্লে’ কিংবা আত্মহত্যার ঘটনার উল্লেখ করা হয়নি। তাঁর ওই রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, আইটি কর্মী সৃঞ্জয় দাশগুপ্তের হৃদ্যন্ত্র, লিভার এবং কিডনি স্বাভাবিকের চেয়ে বড় ছিল। রক্তচাপের সমস্যাও ছিল। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শরীরে রক্তের চাপের সমস্যা থাকলে লিভার এবং কিডনির আকারের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। রিপোর্ট সামনে আসার পর দিলীপ ঘোষ যুব সমাজকে নেশা সম্পর্কে সতর্ক বার্তা শোনালেন।
ময়না তদন্তের রিপোর্ট সামনে আসার পর রিঙ্কুর স্বামী দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘ড্রাগের সমস্যা ওর আগে থেকেই ছিল। ওর কাউন্সেলিং চলছিল। ওর অফিসের ডাক্তার দেখত।’ তিনি আরও বলেন, সৃঞ্জয়ের প্রাথমিক ময়নাতদন্তের রিপোর্টও মৃত্যুর পিছনে শারীরিক সমস্যার দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। সৃঞ্জয়ের এই করুণ পরিণতির পর বুধবার মর্নিং ওয়াকে এসেও নেশার কুপ্রভাব নিয়ে বারবার যুব সমাজকে সতর্ক করলেন দিলীপ ঘোষ। তিনি যথেষ্ট উদ্বেগের সঙ্গে বলেন, ‘আজকের যুব সমাজের মধ্যে নেশার যে কি প্রভাব, তার এটা একটা নমুনা। ঠিক কী হয়েছিল বলার আগেই তো ছেলেটা শেষ হয়ে গেল। আমাদের সবার কাছে এটা একটা বড় শিক্ষা। আমাদের ছেলেমেয়েরা কোথায় যাচ্ছে, কী করছে? তাকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করে দিলেই দায়িত্ব শেষ হয়না। তারপরেও এতবড় রিস্ক থেকে যায়। এটাই চিন্তার বিষয়।’
প্রসঙ্গত মঙ্গলবার সকালে সৃঞ্জয়ের সংজ্ঞাহীন দেহ উদ্ধার হয়। এরপর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেল পাঁচটা নাগাদ ময়না তদন্ত শেষ হয়। কাজ মিটে গেলে সেখান থেকে দেহ নিমতলা শ্মশানে এনে শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়। ময়না তদন্তের সময় প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে মৃত্যু হয়েছিল রিঙ্কুর পুত্রের। মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ, অ্যাকিউট হেমরেজিক প্যানক্রিয়াটাইটিস। অর্থাৎ, অগ্ন্যাশয়ে কোনও প্রদাহ হয়েছিল। তা ছাড়া, হৃদ্যন্ত্রের আকার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল সৃঞ্জয়ের। অগ্ন্যাশয়ে রক্তক্ষরণ থেকে মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিক রিপোর্টে আভাস পাওয়া গিয়েছে।
এদিকে পুত্র সৃঞ্জয় দাশগুপ্তের মা রিঙ্কু মজুমদার বলেছেন, সৃঞ্জয়ের এক বছর আগে থেকেই নিউরোর সমস্যা ছিল। ওষুধও চলছিল। কিন্তু, সম্প্রতি তার মন খারাপ ছিল। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করছিলেন না। সময়মতো ওষুধও খাচ্ছিল না। সূত্রের খবর, সোমবার রাতে সৃঞ্জয় নিউটাউনের যে ফ্ল্যাটে থাকতেন সেখানে একটি পার্টি ছিল। অফিসের কয়েকজন সহকর্মীও গিয়েছিলেন সেই পার্টিতে।
উল্লেখ্য, গত ১৮ এপ্রিল বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের সঙ্গে রিঙ্কুর বিয়ে হয়। তাঁর বিয়ের মাত্র ২৫ দিনের মাথায় ছেলের আকস্মিক মৃত্যুতে হতভম্ব ‘মা’ রিঙ্কু মজুমদার। স্তম্ভিত স্বামী দিলীপও। নিমতলা শ্মশানে সৃঞ্জয়ের দেহের সামনে দাঁড়িয়ে দিলীপ বলেন, ‘মায়ের সব কিছু ছিল ছেলে। অনেক কষ্টে ওকে মানুষ করেছে। ছেলেও সর্বগুণসম্পন্ন। পড়াশোনায় ভাল। দেখতে-শুনতে ভাল। ভাল কথা বলত। ওর প্রতি আমারও একটা মোহ তৈরি হয়েছিল। কখনও ভাবিনি এমন কিছু হতে পারে…দুর্ভাগ্য আমার। পুত্রসুখ হয়নি, কিন্তু পুত্রশোক হল, যা কল্পনাই করিনি।’