• বাঁকুড়ায় দেদার নদী পাড় দখল করছে জমি হাঙররা
    বর্তমান | ১৫ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: বাঁকুড়ায় দখল হয়ে যাচ্ছে গন্ধেশ্বরী নদীর চর। দ্বারকেশ্বর নদের পাড়ও দিনদিন জমি হাঙরদের কব্জায় চলে যাচ্ছে। অভিযোগ, সেচদপ্তরের একাংশের মদতে নদনদীর জায়গা দিনেদুপুরে দখল হয়ে যাচ্ছে। বাঁকুড়া শহরের বুকে জমি জবরদখল হলেও কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এব্যাপারে অবশ্য সেচদপ্তরের আধিকারিকরা প্রশাসন ও বাঁকুড়া পুরসভার ঘাড়ে দায় ঠেলে হাত ধুয়ে ফেলতে চাইছেন। সেচদপ্তরের বাঁকুড়া ডিভিশনের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার শুভাশিস পাত্র বলেন, জবরদখলের বিষয়টি দেখার দায়িত্ব পুরসভা ও প্রশাসনের। নদীর জায়গাও তাদেরই দখলমুক্ত করতে হবে। এব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই। 

    বাঁকুড়া পুরসভার চেয়ারম্যান অলকা সেনমজুমদার বলেন, নদীর জায়গা সেচদপ্তরের আওতায় রয়েছে। ফলে তারা দায় এড়াতে পারে না। 

    জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, কোনও সরকারি জায়গা দখলমুক্ত করতে হলে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে পুলিস ও প্রশাসন সাহায্য করে থাকে। সেচদপ্তর প্রশাসনের কাছে সাহায্য চেয়েছে বলে আমার জানা নেই। আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে সেচদপ্তর পার পাবে না। নদীর জায়গা জবরদখল নিয়ে তাদেরই জবাবদিহি করতে হবে। 

    উল্লেখ্য, বাঁকুড়া শহরের দু’পাশে গন্ধেশ্বরী নদী ও দ্বারকেশ্বর নদ বয়ে গিয়েছে। দীর্ঘ বাম আমলে বহু বার চর্চা হলেও গন্ধেশ্বরী-দ্বারকেশ্বর প্রকল্প রূপায়িত হয়নি। তৃণমূল জমানাতেও ওই প্রকল্প কার্যত বিশবাঁও জলে পড়ে রয়েছে। এব্যাপারে অবশ্য এর আগে রাজ্য সরকারের তরফে কেন্দ্রের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার টাকা বরাদ্দ না করায় প্রকল্প রূপায়ণ সম্ভব হচ্ছে না বলে রাজ্যের অভিযোগ। দ্বারকেশ্বর নদের জলধারণ ক্ষমতা অনেকটাই বেশি। তুলনামূলকভাবে গন্ধেশ্বরী নদীর কলেবর অনেক কম। ওই নদীতে সারাবছর জল থাকে না। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় গন্ধেশ্বরী নদী মজে গিয়েছে। ফলে বর্ষার সময় দু’কূল ছাপিয়ে নদীর জল জনপদ ভাসিয়ে দেয়। সেই জল ধরে রাখতে পারলে সেচের পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানীয় জলের স্তরও অনেক উপরে উঠে আসবে। ফলে সরাসরি সেচের পাশাপাশি অগভীর নলকূপ বা সাবমার্সিবলের সাহায্যে জল উত্তোলন সহজ হবে। তা না হয়ে উল্টে দিনদিন গন্ধেশ্বরী দিনদিন জবরদখল হয়ে যাওয়ায় বাঁকুড়াবাসী ক্ষুব্ধ। 

    গন্ধেশ্বরী নদী বাঁচাও কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সন্তোষ ভট্টাচার্য বলেন, নদীর জায়গা দখল করে ব্যবসা চলছে। নদীর পাড়ে ইট, বালি, পাথর বিক্রি করা হচ্ছে। মেলার পাশাপাশি স্থায়ী দোকানও তৈরি হচ্ছে। সেচদপ্তরকে বহুবার বলা সত্ত্বেও নদীর জায়গা মাপজোখ করা হচ্ছে না। সেচদপ্তরের মদত ছাড়া এভাবে নদীর জায়গা দখল হওয়া সম্ভব নয়। অবিলম্বে নদীর জায়গা দখলমুক্ত করার উদ্যোগ না হলে আমরা বৃহত্তম আন্দোলনে নামব। 

    বাঁকুড়া পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার দিলীপ আগরওয়াল বলেন, কিছুদিন আগে সতীঘাট বাইপাসের পাশে গন্ধেশ্বরী নদীর উপর এক ব্যক্তি বাড়ি তৈরির জন্য ভিত খনন করেন। আমি বাধা না দিলে পাকা ঘর তৈরি হতো। আমি বিষয়টি জানালে পুরসভা লোক পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেয়। নদীর জায়গা জবরদখল হলেও সেচদপ্তর সম্পূর্ণ উদাসীন রয়েছে। প্রশাসনের এব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
  • Link to this news (বর্তমান)