২৩ বছর আগে হলদিয়ায় মহিলা ও তিন সন্তানকে খুন, ফের তদন্তের নির্দেশ
বর্তমান | ১৫ মে ২০২৫
সংবাদদাতা, হলদিয়া: ২৩ বছর আগে এক মহিলা ও তাঁর তিন সন্তানকে খুনের মামলায় ফের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হলদিয়া মহকুমা আদালত। ২০০২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি হলদিয়ার পাতিখালিতে এইচএফসি সার কারখানার সিআইএসএফ আবাসনে ওই খুনের ঘটনা ঘটেছিল। বিজয়কুমার শুক্লা নামে এক সিআইএসএফ জওয়ানের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী সহ তাঁর তিন সন্তান খুন হন। ঘটনার পর বিজয়বাবুর প্রথম পক্ষের ছেলে নিরঞ্জনকুমার বেপাত্তা হয়ে যায়। বিজয়বাবু তাঁর বড় ছেলের নামে থানার কাছে অভিযোগ জানান। কিন্তু, পুলিসের চার্জশিটে তার নাম ছিল না। তবে, অন্য একটি খুনের ঘটনায় এখন নিরঞ্জন মুম্বইয়ের থানের জেলে রয়েছে। সেই কেসে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ই অভিযুক্ত সৎ মা ও তিন ভাই-বোনকে খুনের কথা স্বীকার করেছে বলে মুম্বই ক্রাইম ব্রাঞ্চের দাবি। বুধবার ২০০২ সালের খুনের মামলার নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
হলদিয়া আদালতের সরকারি আইনজীবী রাজদূত মাইতি বলেন, ২০০২ সালের একটি খুনের মামলা আদালত পুনরায় তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। পুলিসের তরফে নিরঞ্জন কুমার শুক্লাকে গ্রেপ্তার করার জন্য আদালতের কাছে আবেদন করা হয়। বিচারক অভিযুক্তকে সশরীরে হাজির করার নির্দেশ দেন। অভিযুক্ত ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার হয়েছে। তাই নিয়ম অনুযায়ী ‘শোন অ্যারেস্ট’ করা হবে।আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, বিহারের ছাপরা জেলার গুলটেনগঞ্জের বাসিন্দা বিজয়বাবু ছিলেন শিল্প নিরাপত্তা রক্ষী বাহিনীর কর্মী। হলদিয়ার পাতিখালিতে এইচএফসি সার কারখানার আবাসনে থাকতেন। তাঁর সঙ্গে থাকত প্রথম পক্ষের ছেলে নিরঞ্জন, দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী গীতা শুক্লা ও তাঁর দুই নাবালিকা মেয়ে এবং এক ছেলে। ২০০২ সালে ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সার কারখানার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন বিজয়বাবু। ২৬ ফেব্রুয়ারি ফোন মারফত তিনি জানতে পারেন, বাড়িতে দুই নাবালিকা মেয়ে এবং ছেলেকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। তাঁর স্ত্রী আশঙ্কাজনক অবস্থায় হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি। সেই সময় নিরঞ্জনের বয়স ছিল একুশ বছর। সে হাওড়ার একটি জুট মিলে কাজ করত। অভিযোগ, দুই নাবালিকা এবং শিশুপুত্রকে ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে মারা হয়। ওই মহিলাকে জুতোর লেস গলায় পেঁচিয়ে মারার চেষ্টা হয়। পরে এনআরএস হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
২০০৩ সালের ১১ অক্টোবর হলদিয়া আদালতে যে চার্জশিট জমা দেওয়া হয় তাতে নিরঞ্জনের নাম ছিল না। পরে মামলা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০০৮ সালের মুম্বইয়ের একটি খুনের মামলায় গত ২০মার্চ বেঙ্গালুরু থেকে নিরঞ্জনকে গ্রেপ্তার করে মুম্বই পুলিসের ক্রাইম ব্রাঞ্চ। তাকে জেরা করতেই পুরনো খুনের পর্দা ফাঁস হয়। পুলিসকে নিরঞ্জন জানায়, ২০০২ সালের হলদিয়ায় সৎ মা, ভাইবোনদের সে খুন করেছিল। এরপর মুম্বই পুলিসের তরফে হলদিয়া থানায় বিষয়টি জানানো হয়। হলদিয়া থানার পুলিসের আবেদনের ভিত্তিতে আদালত ওই মামলাটি ফের নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। বর্তমানে নিরঞ্জন থানের সেন্ট্রাল জেলে রয়েছে। বুধবার হলদিয়া থানার তরফে আদালতে আবেদন করা হয় ‘শোন অ্যারেস্ট’ করার জন্য। আদালত অভিযুক্তকে হাজির করার অনুমতি দেয়।