• নলহাটিতে বিস্ফোরক উদ্ধার কাণ্ড, পুলিসের জালে বিজেপির বুথ এজেন্ট শাহে আলম
    বর্তমান | ১৫ মে ২০২৫
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: নলহাটিতে বিস্ফোরক উদ্ধার কাণ্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস। পুলিসের জালে ধরা পড়ল বিজেপির বুথ এজেন্ট শাহে আলম ওরফে বিকি। মঙ্গলবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বুধবার ধৃতের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস)-এর একাধিক কড়া ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। ধৃতকে এদিন রামপুরহাট আদালতে তোলা হয়। সরকারি আইনজীবী সৈকত হাটি বলেন, অভিযুক্তকে ১০ দিনের জেলা হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন  বিচারক। এর আগে, গত জানুয়ারি মাসেও বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় বিকিকে গ্রেপ্তার করেছিল রামপুরহাট থানার পুলিস। 

    গত ৭ মে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া নলহাটির পাসিনালা বেসরকারি স্কুলের সামনে দু’টি পরিত্যক্ত গোডাউনে হানা দেয় জেলা এনফোর্সমেন্ট ব্যাঞ্চ। দরজা ভেঙে ৬৬ বস্তা অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট (প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি), ১৭ প্যাকেট জিলেটিনস্টিক (প্রতি প্যাকেটে ২০০ পিস) ও ৪ প্যাকেট ডিটোনেটর (প্রতি প্যাকেটে ১৫০০ পিস) উদ্ধার হয়। সেই সময় মজুতকারী কাউকে পাওয়া যায়নি। তদন্তে নেমে পুলিস জানতে পারে শাহে আলম ওরফে বিকি অবৈধভাবে বিস্ফোরক মজুত রেখে কারবার চালাচ্ছিল। সেই মতো পুলিস শাহে আলমের নামে স্বতঃপ্রণোদিত এফআইআর করার পাশাপাশি তার খোঁজ শুরু করে। অবশেষে, মঙ্গলবার রাতে তাকে ধরতে সক্ষম হয় পুলিস। 

    গত জানুয়ারি মাসে রামপুরহাটের ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া হস্তিকাঁদা জঙ্গলের ভিতরে একটি পরিত্যক্ত গোডাউন থেকে প্রচুর বিস্ফোরক উদ্ধার করে জেলা এনফোর্সমেন্ট ব্যাঞ্চ। সেই ঘটনাতেও পুলিস স্বতঃপ্রণোদিতভাবে যে পাঁচজনের নামে এফআইআর করে, তাতে প্রথম নাম ছিল বিজেপির এই বুথ এজন্টের। পরে তাকে গ্রেপ্তার হয়। কিন্তু লঘু ধারায় মামলা হওয়ায় কয়েকদিনের মাথায় জামিনও পেয়ে যায় বিকি। এরপরই সে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। নলহাটির প্রত্যন্ত পাসিনালা গ্রামের স্কুলের সামনে বিস্ফোরকের কারবার ফাঁদে। তবে শেষ রক্ষা হল না।  

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শাহ আলমের বাড়ি ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া নলহাটি থানার লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামে। বর্তমানে সে পাশের উদয়নগর হাইস্কুলের পাশে বাড়ি বানিয়ে বসবাস করে। স্থানীয়রা বলেন, একটা সময় আর্থিকভাবে অত্যন্ত দুর্বল বিকি লটারির টিকিট বিক্রি করত। পরে সুদের কারবার শুরু করে। এখন আঙুল ফুলে কলা গাছ অবস্থা। প্রচুর টাকার মালিক। হরিদাসপুর গ্রামে কাপড়ের দোকানও করেছে সে। উদয়নগর গ্রামে দু’টি পাকা দোতলা বাড়ি। গত লোকসভা নির্বাচনের সময় উদয়নগর হাইস্কুলের বুথে বিজেপির এজেন্ট ছিল এই শাহে আলম।  

    এদিকে, বিকির গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনা নিয়ে জেলায় রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে উঠেছে। তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই সব দুষ্কৃতীদের নিয়েই বিজেপির কাজ-কারবার। স্কুলের সামনে বিস্ফোরক মজুত করছে। অভিযুক্তর এহেন দুঃসাহসিক হওয়ার পিছনে বিজেপির মদত রয়েছে। বিজেপির বুথ এজেন্ট মানেই সে ভাবছে এনআইএর ভয় নেই। সেই সাহস থেকেই অবৈধ বিস্ফোরকের কারবার করছে। রাজ্যের পুলিস সজাগ রয়েছে বলে ভয়াবহ বিস্ফোরণের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছে উদয়নগর। গ্রেপ্তারও করা হয়েছে অভিযুক্তকে।’  

    অন্যদিকে, ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে বিকির সঙ্গে সংস্রব এড়াতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। এদিন দলের জেলা নেতা শান্তনু মণ্ডল বলেন, ‘ও আমাদের বুথ এজেন্ট হতে পারে। অনেকেই তো বিজেপিতে এসেছে, যারা আগে তৃণমূল করত। এখন ওর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। বর্তমানে অভিযুক্ত  তৃণমূলের আর্থিক সাহায্যকারী লোক। আমরাও চাই, এমন ব্যক্তিদের ধরে শাস্তি দেওয়া হোক। আইন আইনের পথ চলুক। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এরাজ্যের তৃণমূল সরকার দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না। উল্টে তাদের সাহায্য করে।’  
  • Link to this news (বর্তমান)