সুজিত ভৌমিক, কলকাতা: দু’টি কিডনিই অকেজো কনস্টেবল মনোয়ার আনসারির। ডায়ালিসিসে ভর করে কোনওমতে বেঁচে রয়েছেন তিনি। দ্রুত কিডনি প্রতিস্থাপন করা দরকার। ফলে হাতে সময় বড্ড কম। কিন্তু লাল ফিতের ফাঁসে ছ’মাস ধরে আটকে রয়েছে সেই প্রক্রিয়া।
মনোয়ারের পরিবারের অভিযোগ, রায়গঞ্জ পুলিস জেলার কর্ণজোড়া ফাঁড়ির ওসি সোমনাথ পাটোয়ারির চূড়ান্ত অসহযোগিতার ফলেই আটকে রয়েছে মনোয়ারের কিডনি-প্রতিস্থাপন। ফলে জীবন সংকট হতে বসেছে রাজ্য পুলিসে ডেপুটেশনে থাকা কলকাতা পুলিসের এই কনস্টেবলের। অভিযোগ, কর্ণজোড়া ফাঁড়ির ওসি এ সংক্রান্ত এনকোয়ারি রিপোর্ট স্বাস্থ্যভবনে না পাঠিয়ে ফেলে রেখেছেন। ওই ওসি ‘ডোনার’ বদল করার জন্যও চাপ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ।
এনিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে কর্ণজোড়া ফাঁড়ির ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কিডনি দাতা অত্যন্ত গরিব। আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। এক্ষেত্রে কোনও আর্থিক লেনদেন আছে কি না, সেটাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাছাড়া ওই পুলিসকর্মীর পরিবার এখনও সব নথি দিতে পারেনি।’ তবে ডোনার বদলের জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগ তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, মালদহের রতুয়ার যুবক মনোয়ার। ২০১৭ সালে কলকাতা পুলিসে যোগ দেন তিনি। কলকাতা পুলিসের সদ্যগঠিত ভাঙড় ডিভিশনের পোলেরহাট থানায় কর্মরত ছিলেন তিনি। ২০২৪ সালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, বছর বত্রিশের এই পুলিসকর্মীর দু’টি কিডনিই বিকল হয়ে গিয়েছে। পুলিস বারাকে থেকে প্রতি সপ্তাহে ডায়ালিসিস এবং খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে হাজারো বিধিনিষেধের কারণে বিপাকে পড়েন তিনি। তখন তিনি নিজের জেলা মালদহে বদলির জন্য আবেদন করেন। চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি মানবিক কারণে পুলিস প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা তাঁকে কলকাতা থেকে মালদহে ডেপুটেশনে বদলির নির্দেশ দেন। কিন্তু প্রশাসনের লাল ফিতের ফাঁসে ছ’মাস ধরে আটকে রয়েছে মনোয়ারের কিডনি প্রতিস্থাপন।
সরকার এবং রাজ্য পুলিসের শীর্ষকর্তারা এই মুমূর্ষু কনস্টেবলের জীবন বাঁচাতে মানবিক ভূমিকা নিয়েছেন। কিন্তু রায়গঞ্জ পুলিস জেলার কর্ণজোড়া ফাঁড়ির ওসি প্রতি পদক্ষেপে অসহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ উঠছে। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য রায়গঞ্জ রেঞ্জের ডিআইজি সুধীরকুমার নীলকান্তমের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখে স্বাস্থ্যভবনে যাতে দ্রুত রিপোর্ট দেওয়া যায়, সেই চেষ্টা করব।’