• ট্রেনের কামরায় সন্তান প্রসব, হাততালি দিয়ে নবজাতককে স্বাগত জানালেন যাত্রীরা...
    আজকাল | ১৫ মে ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক:  বুধবার নিউ আলিপুরদুয়ার রেল স্টেশনে তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেস ট্রেনের কামরায় সন্তান প্রসব করলেন মা। জানা গিয়েছে এদিন বিহারের ভাগলপুর এলাকার বাসিন্দা বছর ২৬-এর নেহাদেবী নামে একজন গর্ভবতী মহিলা আত্মীয়'র সঙ্গে গৌহাটি থেকে কোয়েম্বাটুর ট্রেনে করে বাড়ি যাচ্ছিলেন। চলন্ত ট্রেনে নেহাদেবী'র প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়। উপায় না বুঝে তাঁরা নিউ আলিপুরদুয়ার রেল স্টেশনে নেমে পড়েন। কিছুক্ষণ বাদেই নিউ আলিপুরদুয়ার রেলস্টেশন থেকে তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেস কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার কথা। ট্রেনের যাত্রীদের নিরাপত্তাজনিত বিষয়ে খোঁজ নিতে প্লাটফর্মে টহল দিচ্ছিলেন কর্তব্যরত আরপিএফ কর্মী স্বপ্না দাস। 

    সেই সময় ওই আরপিএফ কর্মী স্টেশনের ২ নম্বর প্লাটফর্মে নেহাদেবী'কে প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাতে দেখেন। তড়িঘড়ি তিনি বিষয়টি রেলের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। কিন্তু নেহা দেবী'র প্রসব যন্ত্রণা আরও বেড়ে গেলে, তাঁকে ৩ নম্বর প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেস ট্রেনের এস-৮ কামরায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই নেহাদেবী এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। ওই অবস্থায় মা এবং নবজাতক শিশুকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে, তাঁদের ট্রেনের কামরাতেই রাখা হয়।  

    প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরিষেবা দিতে এগিয়ে আসে রেল কর্তৃপক্ষ। খবর দেওয়া হয় রেল হাসপাতালের চিকিৎসক এবং নার্সদের। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও মা এবং শিশুর কথা ভেবে তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেস ট্রেনটিকে প্ল্যাটফর্মে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।  আসেন রেলের আধিকারিকরা। প্লাটফর্মের পাশে অ্যাম্বুল্যান্স ও স্ট্রেচারের ব্যবস্থা করা হয়। আলিপুরদুয়ার জংশন রেল হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে মা ও শিশুর চিকিৎসা শুরু করেন। অবশেষে চিকিৎসকরা সদ্যজাত শিশু এবং তার মা'কে নিয়ে ট্রেনের কামরা থেকে বেরিয়ে আসেন। তাঁরা বেরোতেই প্লাটফর্মে থাকা যাত্রী ও অন্যান্য রেল কর্মীরা করতালির মাধ্যমে তাঁদের স্বাগত জানান। ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে গেলেও মা ও শিশুর কথা ভেবে তিস্তাতোর্সা এক্সপ্রেস ট্রেনটিকে প্ল্যাটফর্মে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। রেলের অ্যাম্বুলেন্সে সদ্যোজাত শিশু এবং মা'কে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান রেলকর্মীরা। এরপরই তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেস ট্রেন নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশন ছেড়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। সম্পূর্ণ ঘটনায় তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেস ট্রেন নির্ধারিত সময়ের প্রায় দেড় ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ে। ঘটনায় রেল দপ্তরকে কুর্নিশ জানান প্ল্যাটফর্মে থাকা রেল যাত্রীরা।

    এই বিষয়ে আলিপুরদুয়ার জংশন রেল হাসপতালের চিকিৎসক ডাঃ আশুতোষ সিং জানান, 'খবর পাওয়ার পরেই আমরা স্টেশনে চলে আসি। প্রয়োজনীয় সমস্ত চিকিৎসা করা হয়েছে। বর্তমানে মা এবং শিশু দুজনেই সুস্থ। পরবর্তী চিকিৎসার জন্য তাঁদেরকে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

    ট্রেনের যাত্রী রাহুল কর ও পিংকি বিশ্বাস বলেন, 'প্রথমে বুঝতে পারছিলাম না কী কারণে ট্রেনটি দেরি করছে। সম্পূর্ণ ঘটনা জানার পর খুব ভালো লাগল। এক সদ্যোজাত শিশু এবং মা'র দিকে যেভাবে রেল সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তা প্রশংসনীয়। এমন ঘটনার সাক্ষী হব কখনও ভাবিনি।'
  • Link to this news (আজকাল)