পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ডিএ বা মহার্ঘ ভাতা সংক্রান্ত মামলার শুনানি ফের পিছিয়ে গেল সুপ্রিম কোর্টে। এই নিয়ে পর পর ১৮ বার শীর্ষ আদালতে পিছলো ডিএ মামলার শুনানি। বুধবার দুপুর ২টো নাগাদ বিচারপতি বিক্রম নাথ, বিচারপতি সঞ্জয় করোল এবং বিচারপতি সন্দীপ মেহতার বেঞ্চে মামলার শুনানি ছিল। এই শুনানি শেষ বার হয়েছিল গত বছর ১ ডিসেম্বর। ডিএ মামলা ১১ মে এজলাস বদল করে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় করোল এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে পাঠানো হয়। সেখানেই বুধবার শুনানির কথা ছিল। কিন্তু তালিকায় মামলাটি ৪০ নম্বরে থাকায় শুরু থেকেই মামলাটির শুনানি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা যায়। সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়, এদিনও হয়নি ডিএ মামলার শুনানি। আগামী শুক্রবার শীর্ষ আদালতে শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বুধবারের শুনানি নিয়ে অনেকেই আশায় ছিলেন। কিন্তু আবার তা পিছিয়ে যাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন সরকারি কর্মীদের একাংশ। কেন্দ্রীয় হারে এবং বকেয়া ডিএ-র দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশ। ২০২২ সালের ২৮ নভেম্বর রাজ্যের ডিএ মামলা প্রথম বার সুপ্রিম কোর্টে ওঠে। আদালত জানিয়েছিল, রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ডিএ নিয়ে বিস্তারিত শুনানির প্রয়োজন। সময় নিয়ে সব পক্ষের বক্তব্য শোনা হবে। তবে সময়ের অভাবে মামলাটির পূর্ণাঙ্গ শুনানি আর হয়ে ওঠেনি। কখনও রাজ্য সরকারের আইনজীবীর অনুরোধে, কখনও অন্য কোনও কারণে আড়াই বছর ধরে বার বার পিছিয়ে গিয়েছে মামলার শুনানি।
এদিকে মামলা পিছিয়ে যাওয়া নিয়ে এদিন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘আজ দুপুর দুটোয় ডিএ মামলা ছিল। আমরা সকলেই হাজির ছিলাম, কিন্তু বিশেষ কারণে তা হয়নি। আমাদের অনুরোধে আগামী শুক্রবার মামলাটির শুনানি হবে। আর এই মামলা স্থগিত করা হবে না। আগামী শুক্রবার এই মামলার চূড়ান্ত শুনানি হয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।’ প্রসঙ্গত, সরকারি কর্মীদের একাংশের তরফে রয়েছেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং আইনজীবী ফিরদৌস শামিম।
ডিএ মামলা এবং আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত সরকারি কর্মীদের উদ্দেশে বিকাশরঞ্জন বলেন, ‘আমি জানি, বারবার মামলা এভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে, হচ্ছে না। প্রচন্ড অসুবিধে হচ্ছে আমাদের। আমরা যারা কলকাতা থেকে আসি। আমি বুঝতে পারছি প্রচন্ড চাপ পড়ছে আমাদের আন্দোলনের নেতাদের উপর। খরচের বোঝা বইতে হচ্ছে। তবে সব শ্রমিক কর্মচারীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই মামলার জন্য যেন বোঝাপড়া তৈরি করেন।’
২০২২ সালের ২০ মে হাইকোর্ট কেন্দ্রের সমতুল্য ৩১ শতাংশ হারে ডিএ দেওয়ার নির্দেশ দেয় রাজ্যকে। কিন্তু হাইকোর্টের ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ২০২২ সালের ৩ নভেম্বর মামলা দায়ের হয় শীর্ষ আদালতে। প্রথম শুনানি হয় ওই বছরের ২৮ নভেম্বর। রাজ্যের হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। সেই থেকে সুপ্রিম কোর্টে মামলা বিচারাধীন। বিভিন্ন কারণে বার বার পিছিয়েছে ডিএ শুনানি। এদিনের শুনানি ধরে ১৮ বার পিছলো ডিএ মামলা। তবে মামলাটি বিচারাধীন থাকাকালীনই কয়েক দফায় ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও তা কেন্দ্রীয় হারের সমতুল্য হয়নি।
প্রথমবার যখন ডিএ মামলা সুপ্রিম কোর্টে, তখন ২০২২-এ এই মামলার বিচারপতি ছিলেন বিচারপতি দীনেশ মহেশ্বরী এবং বিচারপতি ঋষিকেশ রায়। এরপর এই মামলাটি তালিকাভূক্ত হয় বিচারপতি ঋষিকেশ রায় এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের এজলাসে। আবার ২-২৩-এর মার্চ মাসে মামলাটি ওঠে বিচারপতি দীনেশ মহেশ্বরী এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের এজলাসে। এরপর ২৮ এপ্রিল, ২০২৩ এ ডিএ শুনানি উঠেছিল এই এজলাসে। এরপর অবসর নেন বিচারপতি দীনেশ মহেশ্বরী। এরপর এই মামলার বিচারপতি ঋষিকেশ রায অবসর নেন ২০২৫ এর ৩১ জানুয়ারি।