• ‘দেশের স্বার্থে ছেলেকে ছাড়তে রাজি আছি’, বললেন পূর্ণমের মা-বাবা
    এই সময় | ১৫ মে ২০২৫
  • প্রদীপ চক্রবর্তী, রিষড়া

    ভারত–পাক সংঘর্ষের আবহে ছেলেকে পাকিস্তানি রেঞ্জাররা আটক করেছে শুনে রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছিল রিষড়ার সাউ পরিবারের। পাকিস্তানের হাতে বন্দি বাঙালি বিএসএফ জওয়ান পূর্ণম সাউকে ছাড়িয়ে আনতে বিএসএফ এবং পাক রেঞ্জারদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক হলেও তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

    এর মধ্যেই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যাওয়ায় পূর্ণম আর দেশে ফিরতে পারবে কি না, তা নিয়ে দোলাচলে ছিলেন পরিবারের লোকেরা। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ প্রথম বিএসএফের কাছ থেকে তাঁরা জানতে পারেন, পূর্ণমকে মুক্তি দিয়েছে পাক রেঞ্জাররা।

    সেই খবরটা পাওয়ার পরে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি পূর্ণমের বাবা ভোলানাথ ও মা দেবন্তী। এর জন্য কেন্দ্র এবং রাজ্য, উভয় সরকারকেই ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাঁরা। বিপদের দিনে পরিবারের পাশে থাকায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তবে তাঁরা এটাও জানাচ্ছেন, ছেলে বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেলেও তাঁকে আবারও দেশের কাজেই পাঠাতে চান।

    মা দেবন্তীর কথায়, ‘এটা আমাদের কাছে বড় আনন্দের দিন। ছেলে যে দিন রিষড়ার বাড়িতে আসবে, সে দিন তাঁকে বীরের মতো বরণ করে নেব। ছেলে অনেক বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। তাই বলে ওঁকে আমরা বাড়িতে ধরে রাখতে চাই না। আবার ওঁকে দেশের কাজে পাঠাব।’

    পাশ থেকে বাবা ভোলানাথ বললেন, ‘ছেলে ফিরে আসায় আমি খুশি। কিন্তু তার থেকেও দেশ সবার উপরে। দেশের স্বার্থে ছেলেকে ছাড়তে রাজি আছি।’

    গত প্রায় ২৩ দিন ধরে পাকিস্তানে বন্দি ছিলেন পূর্ণম। এই সময় বাড়ির ল‍োকেদের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগই ছিল না। পূর্ণম কোথায় রয়েছেন, কী করছেন, ছেলে আদৌ বেঁচে রয়েছে কি না, সেই দুশ্চিন্তা কুরে কুরে খাচ্ছিল বৃদ্ধ বাবা–মা’কে। কিন্তু এ দিন ছেলের মুক্তির খবর পেয়ে অনেকটাই চাপমুক্ত হয়েছেন তাঁরা।

    এ দিন দুপুরে ভোলানাথকে পাওয়া গেল অনেকটা খোশমেজাজে। তারই ফাঁকে এই সময়’কে বলেন, ‘আমার ছেলেকে পাকিস্তান থেকে নিরাপদে দেশে ফেরানো হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। পূর্ণম পাকিস্তানি রেঞ্জারদের হাতে বন্দি হওয়ার পরে আমরা খুবই চিন্তায় ছিলাম।

    পহেলগামে জঙ্গি হানা এবং তা নিয়ে দু’দেশের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যাওয়ায় পূর্ণমের মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা আরও ক্ষীণ হয়ে পড়েছিল। তার মধ্যে আবার ওর স্ত্রী রজনী অন্তঃসত্ত্বা। ফলে আমরা ভেবে পাচ্ছিলাম না কী করব। বিএসএফের লোকেরাও কিছু বলতে পারছিল না। আজ খবরটা পাওয়ার পরে এত খুশি হয়েছি, কাউকে বলে বোঝাতে পারব না।’

    মা দেবন্তী জানিয়েছেন, ছেলের সঙ্গে তাঁর ভিডিও কলে কথা হয়েছে। পূর্ণম মাকে বলেছেন, তিনি সুস্থ আছেন। মায়ের কাছ থেকে বাড়ির লোকেদের খোঁজখবর নিয়েছেন। তবে ব্যস্ত থাকায় বেশিক্ষণ কথা বলতে পারেননি পূর্ণম। আবার পরে ফোন করবেন বলে মাকে জানিয়েছেন।

    পূর্ণমের মুক্তির খবর পেয়েই বাড়িতে হাজির হয়েছিলেন প্রতিবেশী নিলীমা চট্ট্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘পূর্ণমকে নিয়ে আমরা পা়ডা–প্রতিবেশীরা খুব চিন্তায় ছিলাম। এখন পাকিস্তান থেকে ওঁকে মুক্ত করে আনা হয়েছে। আমরা ওঁদের পরিবারের পাশে ছিলাম, আছি, ভবিষ্যতেও থাকব।’

    পূর্ণমের মুক্তির খবর চাউর হতেই তাঁর যেখানে বাড়ি সেই রিষড়া হরিসভা ও পিটি লাহা স্ট্রিটের সাধারণ বাসিন্দারা আনন্দে ফেটে পড়েন। পাড়ায় লোকেদের মিষ্ট মুখ করানো হয়। পূর্ণম যেদিন বাড়ি ফিরবেন, সেদিন তাঁকে রাজকীয় সংবর্ধনা দেওয়া হবে বলে পাড়া প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন।

  • Link to this news (এই সময়)