• এক্সপ্রেস রুখে শৌচাগারে প্রসব, নেপথ্যে ‘র‌্যাঞ্চো’ আরপিএফ স্বপ্না
    এই সময় | ১৫ মে ২০২৫
  • পিনাকী চক্রবর্তী, আলিপুরদুয়ার

    ভারতীয় সেলুলয়েডের মেগা হিট ‘থ্রি ইডিয়টস’–এ র‍্যাঞ্চোদের কথা মনে আছে তো? ঠিক সেই ভূমিকায় বাস্তবে দেখা গেল এক আরপিএফ কনস্টেবলকে। নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশনের দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মে।

    এক মহিলাকে প্রসববেদনায় ছটফট করতে দেখে তাঁকে নিয়ে ট্রেনের শৌচাগারে ছুটলেন মহিলা কনস্টেবল। সেখানেই ভূমিষ্ঠ হলো শিশু। তাকে পৃথিবীর আলো দেখিয়ে নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে ছাড়ল এক্সপ্রেস।

    বুধবার কনস্টেবল স্বপ্না দাস ডিউটি করছিলেন স্টেশনে। হঠাৎ দেখেন, এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলা ছটফট করছেন। সঙ্গে সঙ্গে রেলের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে আলিপুরদুয়ার রেলওয়ে জংশন হাসপাতালে প্রসূতিকে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

    কিন্তু প্রসববেদনা ওই যাত্রী এতটাই কাহিল হয়ে পড়েছিলেন যে, হাতে আর সময় ছিল না। সেই সময়ে তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়েছিল শিয়ালদাগামী ডাউন তিস্তা–তোর্সা এক্সপ্রেস। স্বপ্না ডেকে নেন স্টেশনের চাইল্ড হেল্প ডেস্কের কর্মীদের।

    এই কর্মীদের সহযোগিতায় মহিলাকে নিয়ে স্বপ্না উঠে পড়েন তিস্তা-তোর্সার সংরক্ষিত কামরা এস ৮–এ। ট্রেনের শৌচাগারে বেলা ১২টা বেজে ১০ মিনিটে সন্তান প্রসব করেন মহিলা যাত্রী। সদ্যোজাতকে নরম কাপড়ে মুড়িয়ে নিয়ে চিকিৎসক পৌঁছনোর অপেক্ষায় পল গুনতে শুরু করেন স্বপ্নারা।

    ১২টা ৫৫ মিনিট নাগাদ আলিপুরদুয়ার রেলওয়ে জংশন হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকরা নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশনে আসেন। সদ্যপ্রসূতি ও তাঁর সন্তানের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানান, দু’জনেই সুস্থ রয়েছেন।

    তাঁদের জংশন হাসপাতালে নিয়ে যান রেলকর্মীরা। ইতিমধ্যে ডাউন তিস্তা–তোর্সা এক্সপ্রেসের ছাড়ার সময় হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ট্রেনের শৌচাগারে প্রসব পর্ব চলতে থাকায় তা ছাড়তে পারেনি। ১২টা ৫ মিনিটের পরিবর্তে ১টা ২১ মিনিটে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হয় এক্সপ্রেস।

    যে মহিলা যাত্রী সন্তান প্রসব করেছেন, তাঁর নাম নেহা দেবী(২৬)। তিনি বিহারের ভাগলপুর জেলার বাসিন্দা। শিবনাথপুরের মথুরাপুরে তাঁর বাড়ি। সেখানে ফেরার জন্য স্বামী রূপেশ মহালদারের সঙ্গে গুয়াহাটি-মালদা এক্সপ্রেসে সওয়ার হয়েছিলেন।

    আচমকা প্রসববেদনা অনুভব করায় নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশনে নেমে যেতে বাধ্য হন। রূপেশ বলেন, ‘রেল আধিকারিক ও মহিলা কনস্টেবল যে ভাবে সাহায্য করেছেন, তার জন্যে কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।’ ‘র‍্যাঞ্চো’ হয়ে ওঠা স্বপ্না দাস বলেন, ‘যা করেছি তা মানবিকতার টানে। এর বেশি কিছু নয়।’

    এই কাজের জন্য স্বপ্না–সহ আরও তিন আরপিএফ কর্মীকে ২৫ হাজার টাকা পুরস্কার দিয়েছেন উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের জেনারেল ম্যানেজার চেতনকুমার শ্রীবাস্তব। আলিপুরদুয়ারের ডিআরএম অমরজিৎ গৌতম বলেন, ‘সন্তানসম্ভবা মহিলাকে সার্বিক সহযোগিতা করে মানবিকতার অনন্য নজির তৈরি করেছেন আমাদের আরপিএফ মহিলা আধিকারিকরা। তাঁদের ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই।’

  • Link to this news (এই সময়)