প্রথম উচ্চমাধ্যমিক পাস, ইতিহাস গড়লেন বাসন্তি ও সুমিত্রা, শিক্ষার আলোয় আলোড়ন আদিবাসী গ্রামে...
আজকাল | ১৫ মে ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিশ্বভারতী থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে। অথচ শিক্ষার ছোঁয়া থেকে বহু দূরে থাকা আদিবাসী অধ্যুষিত সাহেবডাঙা গ্রাম। এই গ্রামেই গর্বের অধ্যায় লিখলেন দুই কিশোরী, বাসন্তি টুডু ও সুমিত্রা টুডু। গ্রামের ইতিহাসে প্রথমবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় সফল হলেন তাঁরা। এই সাফল্যে খুশির জোয়ারে ভাসছেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের মায়েদের চোখে আনন্দের জল। দুই মা পেশায় দিনমজুর।
ছেলেবেলাতেই বাবাকে হারিয়েছেন বাসন্তি ও সুমিত্রা। দিনমজুর মায়ের সঙ্গে মাঠে ধান রোয়া ও কাটার ফাঁকেই চালিয়ে গেছেন পড়াশোনা। নিজের জমি নয়। অন্যের জমিতে কাজ করেন, সন্ধ্যায় কুপি-আলোয় পড়া। তবু অদম্য জেদের জোরে মাধ্যমিকের পর এবার উচ্চমাধ্যমিকেও উত্তীর্ণ হয়েছেন তাঁরা। সুমিত্রা পেয়েছেন ২১৯ এবং বাসন্তি ২২৯ নম্বর।
সাহেবডাঙা গ্রামের বাস্তবতা করুণ। ৪৬টি পরিবারের বসবাস এই গ্রামে। অধিকাংশ বাড়ি কাঁচা। নেই জল-নিকাশি বা চলাচলের মতো রাস্তার প্রাথমিক পরিকাঠামো। পুকুর অপরিচ্ছন্ন, রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা। একটি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র ছাড়া এখানে নেই কোনও বিদ্যালয়।
এই প্রতিকূলতার মধ্যেই আশার আলো হয়ে উঠেছেন শিক্ষক বুদ্ধিশ্বর মণ্ডল। রজতপুরের পূর্ব-বাহাদূরপুর থেকে প্রতিদিন ১২ কিমি পথ অতিক্রম করে তিনি সাহেবডাঙায় আসেন নিঃশুল্ক পড়াতে। তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্টা, আর দুই কন্যার লড়াই মিলিয়েই এই ঐতিহাসিক ফলাফল।
বুদ্ধিশ্বর মণ্ডল বলেন, 'ওরা খুব কষ্ট করে এত দূর এসেছে। কোনও সাহায্য পায়নি। আমি শুধু পাশে থেকেছি। এটা আমাদের সবার সাফল্য।'
গ্রামবাসী তালাবু বাস্কি বলেন, 'আজ ওরা আমাদের গর্ব। শুধু নিজেরাই নয়, ওদের দেখে গ্রামে আরও প্রায় ৬০ জন ছেলে-মেয়ে পড়াশোনায় আগ্রহী হয়েছে। এটা একটা 'নতুন' শুরু।'
সুমিত্রা ও বাসন্তির লক্ষ্য, গ্রামের অন্যান্য খুদেদের পড়াশোনায় উৎসাহ দেওয়া ও বাল্যবিবাহ বন্ধ করা। ওদের কথায়, 'পড়াশোনা করলেই লোকের ভালবাসা পাওয়া যায়। আমরা চাই কেউ যেন তাড়াতাড়ি বিয়ে না করে। আগে নিজেকে তৈরি করুক।'
শিল্প, সংস্কৃতি ও শিক্ষার শহর বোলপুর-শান্তিনিকেতনের গা ঘেঁষে থেকেও এতদিন আলোছায়ার বাইরে থাকা সাহেবডাঙায় আজ আলো ছড়াচ্ছেন দুই ছাত্রী বাসন্তি ও সুমিত্রা। যাঁদের সাফল্যে হাসছে গোটা গ্রাম। আর সেইসঙ্গে শিক্ষার ছায়ায় তৈরি হচ্ছে এক নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন।