• জল্পনার অবসান, তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিলেন জন বার্লা
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৫ মে ২০২৫
  • জল্পনার অবসান। বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিলেন জন বার্লা। বৃহস্পতিবার তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক সুব্রত বক্সী ও মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূলে যোগ দেন বার্লা। আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ জন বারলাকে পাশে বসিয়ে সুব্রত বক্সী বললেন, ‘রাজ্য বিজেপিতে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন বারলা।’ মমতার কর্মকাণ্ডে খুশি হয়ে তিনি তৃণমূলে যোগদান করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন বলে জানিয়েছেন সুব্রত বক্সী। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর আবেদন অনুমোদন করেছেন।

    দলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে লেখা হয়েছে, ‘মা-মাটি-মানুষের উন্নয়নে বিশ্বাস রেখে, মানুষের কাজ করার জন্য তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করলেন শ্রী জন বার্লা। রাজ্য সভাপতি শ্রী সুব্রত বক্সী এবং মন্ত্রী শ্রী অরূপ বিশ্বাসের উপস্থিতিতে জোড়াফুল শিবিরে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করলেন। তৃণমূল কংগ্রেসের পরিবারে তাঁকে স্বাগত।’

    তৃণমূলে যোগ দিয়ে জন বার্লা বলেন, ‘৬-৭ মাস ধরেই কথা চলছিল। দিদিও ফোন করে কাজ করতে বলেছিলেন। আমি চা বলয় থেকে গিয়ে যখন মন্ত্রী হলাম, প্রত্যেকটা কাজে আমাকে বাধার মুখে পড়তে হতে। আমি প্রধানমন্ত্রী জনবিকাশ প্রকল্পে ১৬০ কোটি টাকার হাসপাতাল করতে চেয়েছিলাম। আমাকে আমার দলের লোক করতে দেয়নি। এখান থেকে দিল্লিতে ফোন করে আমাকে আটকানো হয়। এ ভাবে উন্নয়নের কাজ আটকালে কে ওই পার্টি করবে? কী করব ওই দলে থেকে?’

    প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বার্লা বলেন, ‘জনতা আমাকে ভোট দিয়ে পাঠিয়েছিল কাজ করার জন্য। কিন্তু কাজ করতে পারতাম না। কেন করব ওই দল, যেখানে আমি কাজই করতে পারব না?’ চা বাগানের মানুষের ভোটে বিজেপি জিতলেও, তাঁদের জন্য কিছুই করেননি বলে দাবি জন বার্লার। বরং মমতা বন্দ্যাপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানিয়ে বার্লা তুলে ধরেন চা সুন্দরী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, জমির পাট্টার প্রসঙ্গও। বলেন, ‘বিজেপিকে ভোটে জেতাল, অথচ এক ইঞ্চি জমি দিল না ওরা। অথচ দিদি ৫ ডেসিমেল জায়গা দিয়েছেন। চা বাগানে আমাদের জায়গা তো মিলেছে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো প্রকল্পের ফলেও চা বাগানের বহু মানুষ উপকৃত হচ্ছেন।’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে চা বাগানের একাধিক বিষয়ে, চা শ্রমিকদের নিয়ে কথা বলবেন বলেও জানান তিনি।

    বৃহস্পতিবার জন বার্লার কথায় বারবার উঠে আসে বিজেপির প্রসঙ্গ। তাঁর অভিযোগ, গেরুয়া শিবিরে বারবার কাজ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছেন তিনি। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে চরম কটাক্ষ করে বার্লা এদিন বলেন, ‘এমন কোনও নেতার সঙ্গে কাজ করতে চাই না, যিনি অন্যকে বাধা দেন। জনতাকে ভাগ করে যিনি মুখ্যমন্ত্রী হতে চান, সেই রকম নেতার সঙ্গে দেখাও করতে চান না।’

    বার্লার যোগদানে চা বাগানে সংগঠন আরও শক্তিশালী হবে বলে জানিয়েছেন সুব্রত বক্সী। তিনি জানান, রাজ্য স্তর এবং চা বাগান দুই ক্ষেত্রেই বার্লা কাজ করবেন। বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষকে বারলার দলবদলের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই উনি চেষ্টা করছিলেন। দল ওঁকে অনেক সুযোগ দিয়েছিল। তবে কেন দলবদল করলেন, তা উনি নিজেই বলতে পারবেন।’

    আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ ছিলেন জন বার্লা। চা বলয়ের এই প্রভাবশালী নেতা ২০১৯ সালে বিজেপির টিকিটে লোকসভা ভোটে জয়লাভ করেন। কেন্দ্রের সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন জন বার্লা। তবে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি তাঁকে টিকিট দেয়নি। এর পর থেকেই দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে শুরু করেন তিনি। সূত্রের খবর, দিল্লি থেকেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। তবে তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। মাস কয়েক আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আলিপুরদুয়ারের অনুষ্ঠান মঞ্চে দেখা গিয়েছিল তাঁকে।

    প্রাক্তন সাংসদ নিজেই বলেছিলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী সুযোগ দিলে তিনি একসঙ্গে কাজ করতে চান।’ সেই সময় অবশ্য তৃণমূলের পতাকা হাতে নেননি জন বারলা। ফলে তাঁর দলবদল নিয়ে জল্পনা জারি ছিলই। এরই মাঝে গত রবিবার সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী-সহ একাধিক বিজেপি নেতা গিয়েছিলেন প্রাক্তন বিজেপি সাংসদদের বাড়িতে। সেই সময় মনে করা হচ্ছিল, দলের সঙ্গে দূরত্ব ঘুঁচল বার্লার। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই স্পষ্ট হল ভাঙন।

    ছাব্বিশের নির্বাচনের আগে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এই দলত্যাগ উত্তরবঙ্গের ভোটে যথেষ্ট প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহল মহল। চা বলয়ে তাঁর ভালোই প্রভাব রয়েছে। প্রসঙ্গত, এই আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত মাদারিহাটে ২০২৪ সালে বিধানসভা উপনির্বাচনে জয় পায় তৃণমূল। মাদারিহাট বিধানসভা উপনির্বাচনে ৩০ হাজার ৩৯০ ভোটে জয়ী হন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী জয়প্রকাশ টোপ্পো। অনেকেই বলে থাকেন, এই কেন্দ্রে তৃণমূলের জয়ের পিছনে বড় ভূমিকা পালন করেছেন জন বার্লা।

    রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের পর থেকেই আলিপুরদুয়ারের বড় অংশে বিজেপির মাটি আলগা হতে শুরু করে। অনেকেই বলেন তার নেপথ্যে বিজেপি নেতা জন বার্লা। উপনির্বাচনের আগে কার্যত বোমা ফাটান চা-বস্তির নেতা বার্লা। জানিয়ে দেন, সংগঠনে কাজ করতে পারছেন না তিনি। এখানে ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ (মনোজ টিগগাকে আক্রমণ) দিয়ে কাজ চলে বলেও তোপ দেগেছিলেন। এমনকী তাঁরই আত্মীয় নির্দল হয়ে উপনির্বাচনেও লড়েন।

    প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের অক্টোবরে জন বার্লার বোন মেরিনা কুজুর যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলে। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে সুলকাপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে তিনি জয়ী হয়েছিলেন। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে অবশ্য তাঁকে টিকিট দেয়নি বিজেপি। মেরিনাও বলেন, ‘বিজেপির থেকে উন্নয়নের তেমন কোনও সহযোগিতা পাইনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের কাজ দেখেই তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)