প্রয়াত তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহা। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। গত মঙ্গলবার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তারপর তাঁকে প্রথমে তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালে, পরে কলকাতায় বাইপাসের ধারের একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ১৫ নাগাদ মৃত্যু হয় তাঁর। এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সঙ্গীকে হারালেন বলে এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন তিনি।
সূত্রের খবর, বুধবার হঠাৎই অসুস্থতা বোধ করেন তাপসবাবু। চিকিৎসার জন্য স্থানীয় মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করেন। তখনই জানা যায়, তাপসবাবু ব্রেনস্ট্রোকে আক্রান্ত। এরপরেই তড়িঘড়ি তাঁকে স্থানান্তর করা হয় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার সকালে সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। তাপসের মৃত্যুতে নদিয়ার জেলা রাজনীতিতে তো বটেই, রাজ্য রাজনীতিতেও নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ তাপসের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বিধানসভায়। সেখানে তাঁকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র সহ তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরা।
দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহভাজন ছিলেন তৎকালীন যুব নেতা তাপস সাহা। ২০১১ সালে তেহট্টে জোড়াফুল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তৃণমূলের তরফে টিকিট দেওয়া হয় গৌরীশঙ্কর দত্তকে। দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়ে পড়েন তাপস। সেই নির্বাচনে প্রবল সবুজ ঝড়ের মধ্যেও ওই কেন্দ্র থেকে জিতে যান বাম প্রার্থী। তারপর তাপসকে সাসপেন্ড করেছিল তৃণমূল।
পরে অবশ্য তাপস সাহাকে দলে ফিরিয়ে নেয় তৃণমূল। ২০১৬ সালে নদিয়ারই পলাশিপাড়া কেন্দ্র থেকে তৃণমূল প্রার্থী হিসাবে জয়ী হন তিনি। ২০২১ সালে কেন্দ্র পরিবর্তন হয় তাপসের। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তাপসকে নদিয়া জেলাই তেহট্ট কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। ওই কেন্দ্রেও জোড়াফুল ফোটান তাপস।
নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত নদিয়ার তেহট্টের বিধায়ক তাপস সাহা। তৃণমূল বিধায়কের বাড়িতে তল্লাশিও চালান আধিকারিকরা। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ১২ জন আধিকারিক তাপসের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছিলেন। চাকরি দেওয়ার নাম করে তাপস সাহা কয়েক কোটি টাকা তুলেছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। তাঁর কণ্ঠস্বরও সংগ্রহ করে সিবিআই। এদিকে তাপসের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ হয়ে গিয়েছে বলে বুধবারই হাইকোর্টে জানিয়েছিল সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে এও জানানো হয়, বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করার অনুমতি সম্প্রতি দিয়েছেন বিধানসভার অধ্যক্ষ।
সিবিআইয়ের তরফে অভিযোগ করা হয়, এই মামলায় রাজ্যের দুর্নীতিদমন শাখার আধিকারিকরা কেস ডায়েরি-সহ সম্পূর্ণ নথি দেয়নি। আগামী ২০ মে পরবর্তী শুনানিতে এই নিয়ে রাজ্যের বক্তব্য জানতে চেয়েছেন বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ। তাপস সাহার আইনজীবী বলেন, কেস ডায়েরির একটা অংশ আদালতের কাছে আছে। সেই শুনানির আগেই মারা গেলেন তৃণমূল তাপস সাহা।
দলের বিধায়কের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এক্স হ্যান্ডলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘নদীয়ার তেহট্টের বিধায়ক, আমাদের তৃণমূল কংগ্রেস পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, শ্রী তাপস সাহা’র অকাল মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। তিনি আমার অনেক দিনের পুরাতন সহকর্মী ছিলেন। তাঁর এই মৃত্যু জেলা তথা বাংলার রাজনীতিতে অপূরণীয় ক্ষতি। আমি তাঁর পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও অগণিত সমর্থককে আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাই।’