পাকিস্থানে মানসিক নির্যাতনের শিকার পূর্নম, স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে পাঠানকোট যাবেন স্ত্রী...
আজকাল | ১৬ মে ২০২৫
মিল্টন সেন, হুগলি: মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত। নির্যাতন করা হয়েছে পূর্ণম সাউকে। ফোনে কথা বলে সেটা তিনি পরিষ্কার বুঝতে পেরেছেন। মুখোমুখি কথা বললে বিষয়টা পরিষ্কার হবে। বৃহস্পতিবার একথা বলেছেন সদ্য পাকিস্থান থেকে মুক্তি পাওয়া ভারতীয় সীমারক্ষী বাহিনীর জওয়ানের স্ত্রী রজনী সাউ। তিনি বলেছেন, পাক রেঞ্জার্সদের হাতে আটক হওয়ার পর থেকেই ভাল করে ঘুমাতে দেওয়া হয়নি পূর্ণমকে। নানা প্রশ্নবাণে তাঁকে জর্জরিত করা হয়েছে। পাকিস্তান তাঁকে গুপ্তচর ভেবে হিসেবে মানসিক নির্যাতন করেছে। ফোনে স্বামীর সঙ্গে তাঁর যেটুকু কথা হয়েছে তাতে বুঝতে পেরেছেন মানসিকভাবে বিধ্বস্ত পূর্ণম। তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছে। তবে বাড়ি ফিরে আসার পর মুখোমুখি কথা হলে সম্পূর্ণ বিষয়টা আরও পরিষ্কার হবে জানিয়েছেন, রজনী। তাই দেখা করাটা খুবই জরুরি। দেখা করতে পাঠানকোট যাবেন তিনি।
টানা তিন সপ্তাহ পাকিস্তানে বন্দি থাকার পর বুধবার দেশে ফিরেছেন বিএসএফ জওয়ান পূর্ণম কুমার সাউ। আটারি-ওয়াঘা বর্ডার হয়ে ভারতে ফিরে আসেন তিনি। পাঠানকোটে পৌঁছে স্ত্রী রজনী সাউকে ভিডিও কল করেন। তারপর রাত ৯টায় আবারও ফোন করে স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। এই প্রসঙ্গে রজনী দেবী জানিয়েছেন, পূর্নম তাঁকে জানিয়েছে সে সুস্থ আছে। তবে এখনই সে বিষড়ার বাড়িতে ফিরতে পারবে না। ওর নিজের কাছে ফোন নেই। এক সহকর্মীর ফোন থেকে সে ফোন করেছিল। আগামী আগস্ট মাসে ছুটিতে বাড়িতে আসার কথা ছিল। স্বস্তি একটাই এখন সে ভারতে রয়েছে। তাঁর কর্মস্থলে রয়েছেন। বাড়িতে ফিরতে দেরি হলেও অসুবিধা নেই। আর বাড়িতে ফিরলেই তাঁর জন্য খুব বড় করে ওয়েলকাম পার্টি হবে। বিএসএফ হেডকোয়ার্টারে কথা হয়েছে। ওনারা হয়তো ডাকবেন। তাই স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে আগামী সপ্তাহে তিনি পাঠানকোট যাবেন। এই প্রসঙ্গে ভারতীয় সেনার অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাপস চক্রবর্তী জানিয়েছেন, জেনেভা কনভেনশনের রুল পাকিস্তান মানে না। তাই যুদ্ধ বন্দীদের নির্যাতন করার বহু নিদর্শন আছে পাকিস্তানের। এক্ষেত্রেও পূর্ণমকে মানসিক নির্যাতন করার অভিযোগ উঠছে। ফলে ওর থেকে তাঁর ব্যাটেলিয়নের খবর নেওয়ার চেষ্টা করা হয়ে থাকতে পারে। পাশাপাশি তাঁর ব্যাটেলিয়নের আধিকারিকদের বিষয়ে বিভিন্ন খবর নেওয়ার চেষ্টা করা হয়ে থাকতে পারে। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেহেতু পূর্ণম কর্মরত অবস্থায় ছিল, তাঁর কাছে অস্ত্র এবং গোলাবারুদ ছিল। সেগুলি কী অবস্থায় আছে। সাধারণত দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে অস্ত্র ফিরিয়ে দেওয়া হলেও গোলাবারুদ ফেরায় না পাকিস্থান। পাশাপাশি এদেশের অস্ত্র নকল করে নেওয়ার একটা অভ্যাস ওদের মধ্যে আছে। ফলে এখন বেশ কিছুদিন ধরে পূর্ণমের সঙ্গে ডি-ব্রিফিং চলবে। নানান সময়ে ঘুরে ফিরে মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের একাধিক আধিকারিক তাঁকে একই প্রশ্ন করতে পারেন। জানার চেষ্টা করবেন, সে যা বলছে সেটা ঠিক কি না। একই প্রশ্ন বারবার করার অর্থ, পাকিস্থানে তাঁর থেকে কী কী তথ্য জানার চেষ্ঠা করা হয়েছে। পাকিস্থান সেনার কোন বিভাগ এবং কোন স্তরের আধিকারিক তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে বা মানসিক নির্যাতন করেছে। সে কতটা ভেঙে পড়েছিল। উত্তরেই বা কী বলেছেন।
কর্নেল চক্রবর্তী বলেছেন, শুরুতেই শারীরিক পরীক্ষা করে দেখা হয় সে সুস্থ কি না। তারপরে দেখা হয় সে মানসিক ভাবে কতটা সুস্থ। কারণ জিজ্ঞাসাবাদ বা ডি-ব্রিফিং-এর সময় সে ঠিকঠাক উত্তর দেওয়ার মতো অবস্থায় আছে কি না। তারপরে পরীক্ষা করে দেখা হয় কোনও ইলেট্রনিক যন্ত্র জওয়ানের শরীরের কোথাও স্থাপন করা হয়েছে কি না। সেটা সাধারণত স্বজ্ঞানে প্রতিস্থাপন করা হয়ে থাকলে তিনি অনায়াসেই বলে দিতে পারবেন। অজ্ঞান করে করা হলে সেটা জানা থাকে না। এরপর ধাপে ধাপে ডি-ব্রিফিং চলতে থাকে। বুধবার সকালে ফোন করে রজনী দেবীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সন্ধ্যায় বাড়িতে গেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এদিন সিপিআইএম নেতৃত্ব, দেবব্রত ঘোষ, তীর্থঙ্কর রায়, মিঠুন চক্রবর্তী দেখা করতে আসেন পূর্নমের বাড়িতে। জওয়ানের স্ত্রী রজনী ও মা দেবন্তি দেবীর সঙ্গে কথা বলেন। ফুলের তোড়া এবং মিষ্টিও দেন।