• কয়েক মিনিটের ঝড়ে লন্ডভন্ড চোপড়ার চার গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা, গৃহহীন বহু
    বর্তমান | ১৬ মে ২০২৫
  • সংবাদদাতা, চোপড়া: কালবৈশাখীর তাণ্ডবে লন্ডভন্ড চোপড়া ব্লকের চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা। বুধবার গভীর রাতে কয়েক মিনিটের এই ঝড়ে বহু কাঁচা বাড়ি ভেঙে পড়ে। কোনও বাড়ির টিনের চাল উড়ে যায়। কোথাও গাছ পড়ে বাড়ি-ঘর ভেঙেছে। কোথাও আবার শিকড় সুদ্ধ গাছ উপড়ে পড়েছে। অনেক বাড়ির দেওয়ালও মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছে। ক্ষতি হয়েছে চা বাগানেরও। ডাল ও গাছ ভেঙে বহু জায়গায় চা গাছ নষ্ট হয়েছে। বাদ যায়নি ফসলের খেতও। রাত থেকেই গোটক এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। 

    বিধ্বংসী ঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘিরনিগাঁও, মাঝিয়ালি এবং দাসপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক গ্রাম। স্থানীয়রা জানান, বুধবার রাতে ঝড়ের আগে বৃষ্টি শুরু হয়। সঙ্গে ছিল বজ্রবিদ্যুত্ সহ গর্জন। 

    তারপর হঠাৎ করেই প্রবল ঝোড়ো হাওয়া হয়। মুহূর্তের মধ্যে ঘিরনিগাঁও, মাঝিয়ালি ও দাসপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বহু জায়গায় ক্ষয়ক্ষতি হয়। মাঝিয়ালির পঞ্চায়েতের আসরামগছ, জগথরা, লালবাজার, চাকলাগছ এবং গোড়ায়তবস্তি গ্রামের বহু মানুষ ক্ষতির মুখে। মাঝিয়ালি ও দাসপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের হুলাসুগছ, মাফিপাড়া, টেপাগাঁও সহ অন্য গ্রামগুলিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে যাওয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন। ঝড়ের পরও কয়েকঘণ্টা বৃষ্টি হয়। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। ফলে সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েন।

    তবে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে প্রশাসন। চোপড়ার বিডিও সমীর মণ্ডল বলেন, প্রাণহানির কোনও খবর নেই। মূল বাসস্থান কমই ভেঙেছে। রান্নাঘর, গোয়াল বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমস্ত রকমের সহযোগিতা করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত একশোর বেশি ত্রিপল বিলি করা হয়েছে। বিদ্যুত্ পরিষেবা স্বাভাবিক করতে বিদ্যুত্ বণ্টন সংস্থার কর্মীরা কাজ করছেন।

    বুধবারের রাতের ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন হুলাসুগছের বাসিন্দা মালতি হেমরম। ঝোড়ো হাওয়ায় তাঁর ঘরের উপর গাছ ভেঙে পড়ে। কোনওরকমে প্রাণে বেঁচেছেন তিনি। অনেকের বাড়ি ভেঙে যাওয়ায় প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। ঘিরনিগাঁওয়ের আসরামগছ গ্রামের বাসিন্দা আব্বাস আলিও ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তাঁর ঘরে গাছ ভেঙে পড়ে। তাঁর কথায়, এমন ঝড় আগে কখনও দেখিনি। বহু জায়গায় গাছ ভেঙে পড়েছে।

    বৃহস্পতিবার সকালে চোপড়া পঞ্চায়েত সমিতির সহকারী সভাপতি ফজলুল হক, ঘিরনিগাঁও গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সোকিমুল ইসলাম সহ তৃণমূল নেতা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলেন। এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন। ফজলুল হক জানান, ব্লক প্রশাসন ও পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সবরকম সাহায্য করা হবে। তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি মহম্মদ রাজু বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির পাশে সরকার এবং দল রয়েছে। ঝড় বিধ্বস্ত এলাকাগুলি পরিদর্শন করেন বিজেপি নেতারাও। বিজেপি নেতা শঙ্কর অধিকারী জানান, বিষয়টি সাংসদের নজরে আনা হবে। এবং দ্রুত সাহায্যের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।  
  • Link to this news (বর্তমান)