ডাকাতির মামলায় দু’বছর ধরে আদালতে গরহাজির দুই অভিযুক্ত, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হতেই জানা গেল একজন মৃত! চাঞ্চল্য
বর্তমান | ১৬ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: ডাকাতির মামলায় দু’বছর আগেই ‘মারা’ গিয়েছে এক অভিযুক্ত। অথচ, কোর্টের কাছে নির্দিষ্ট তথ্য ছিল না। বিচারক টানা গরহাজির অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার কথা বলতেই আসল পর্দা ফাঁস হল। জানা যায়, দু’বছর আগেই উত্তম ভৌমিক নামে ওই অভিযুক্ত মারা গিয়েছে। বুধবার বিষয়টি সামনে আসে। বৃহস্পতিবার ওই মামলায় দু’জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, সেই সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। এদিন ‘মৃত’ উত্তম ভৌমিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। জীবিত নাকি মৃত তা নিয়ে পুলিস রিপোর্ট দেওয়ার পরই মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে আগস্ট মাসে নন্দকুমার থানার শ্রীধরপুর মোড়ে পুলিস সশস্ত্র অবস্থায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করে। তারা ডাকাতি করতে জড়ো হয়েছিল বলে পুলিসের দাবি। তৎকালীন ওই থানার ওসি অজয়কুমার মিশ্র এনিয়ে সুয়োমটো মামলা করে। ডাকাতির ঘটনায় ধৃতদের মধ্যে ভগবানপুরের বেতুলিয়াচকের শেখ মাইসোর, দাসপুরের বেনাই গ্রামের সৈয়দ নাসির, লক্ষ্মণচক গ্রামের লক্ষ্মণ সামন্ত, গোপীগঞ্জ গ্রামের মিরাজ সিরাজুল, কোলাঘাট থানার মাড়োবেড়িয়া গ্রামের শেখ সিরাজ হোসেন এবং মহিষাদলের গড়কমলপুরের নুর আলম ও বাসুলিয়ার উত্তম ভৌমিক ছিল। আগেই শেখ সিরাজ হোসেনের মৃত্যু হয়। মামলা থেকে তার নাম বাদ পড়ে। বাকি ছ’জনের বিরুদ্ধে ওই মামলার বিচার প্রক্রিয়া চলছিল।
বুধবার ওই মামলায় সাক্ষ্য দিতে হাজির হন পুলিস অফিসার আমিনুল ইসলাম। দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তার করার সময় ওই পুলিস অফিসার দলে ছিলেন। তমলুকের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেশন জজের(ফার্স্ট কোট) এজলাসে ওই মামলার সাক্ষ্য চলছে। গত দু’বছর অভিযুক্ত ছ’জনের মধ্যে দু’জন গরহাজির। সিআরপিসি ৩১৭ধারা অনুযায়ী অভিযুক্তদের আইনজীবী দু’বছর ধরে গরহাজির ওই দু’জনের প্রতিনিধি বলে কোর্টকে জানিয়েছেন। তিনিই সকল অভিযুক্তের হয়ে কোর্টে আইনি লড়াই লড়ছেন।
বুধবার বিচারক স্পষ্ট জানান, পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিনে ছ’জন অভিযুক্তকেই কোর্টে থাকতে হবে। তা না হলে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হবে। বিচারকের কথা শেষ হতেই কাঠগড়ায় দাঁড়ানো অভিযুক্তরা জানায়, দু’বছর আগে সংশোধনাগারের মধ্যেই উত্তম ভৌমিকের মৃত্যু হয়েছে। এরপরই কোর্টের মধ্যে হুলস্থূল পড়ে যায়। অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবীকে এনিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন বিচারক। গোটা ঘটনায় তিনিও ভ্যাবাচাকা খেয়ে খান।
বৃহস্পতিবার ফের ওই মামলার দিন ধার্য ছিল। এদিন দু’জন সাক্ষীর সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, বুধবারের ওই ঘটনার পর এদিন আদালত জানায়, উত্তম ভৌমিক সহ মোট দু’জন অভিযুক্ত ধারাবাহিকভাবে অনুপস্থিত। শেখ সিরাজ নামে একজন অভিযুক্তের আগেই মৃত্যু হয়েছে। বাকি ছ’জনের মধ্যে চারজন কোর্টে এলেও দু’জন গরহাজির। আগে ওই দু’জনের সম্পর্কে পুলিসের রিপোর্ট আসুক। তারপর মামলা শুরু হবে। এদিনই দু’জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। তারমধ্যে ‘মৃত’ উত্তম ভৌমিকও আছে। পুলিস এসম্পর্কে রিপোর্ট দেওয়ার পরই পুনরায় সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হবে।
এই মামলার সরকারি আইনজীবী দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, ডাকাতির কেসে মোট অভিযুক্ত সাতজন। একজন আগেই মারা গিয়েছে। মামলা থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও দু’জন ধারাবাহিকভাবে গরহাজির থাকত। অভিযুক্তদের আইনজীবী তাদের প্রতিনিধি হয়ে উপস্থিতি কনফার্ম করতেন। এভাবেই মামলা চলছিল। বুধবার আচমকা জানা যায়, আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও কোর্টের কাছে তার কোনও তথ্য নেই। তাই এই বিষয়টি ফয়সালা করার পরই ফের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে। তাই এদিন দু’জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।