অন্য জনের আইডি-পাসওয়ার্ড জোগাড় করে আধার জালিয়াতি, রানিনগরে ধৃত তিনজনকে জেরা করতে পর্দা ফাঁস
বর্তমান | ১৬ মে ২০২৫
সংবাদদাতা, ডোমকল: অন্যের আইডি ও পাসওয়ার্ড জোগাড় করে আধারের সাইটে ঢুকেই চলত জালিয়াতি। অবৈধভাবে তৈরি করা হতো আধার কার্ড। গ্রাহক জোগাড়ের জন্য হাতিয়ার ছিল হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। কয়েক গুণ টাকা দিয়ে আধার কার্ড তৈরি করতে সেখানে ভিড় করত অনেকে। রানিনগরে আধার কার্ড জালিয়াতি চক্রে তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর এমনই তথ্য উঠে আসছে।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার গোপন সূত্রে খবর পেয়ে রানিনগরের কদমতলায় হানা দিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। একটি বাড়িতে বসে জাল আধার কার্ড তৈরি করা হচ্ছে বলে পুলিসের কাছে খবর ছিল। সেখান থেকে চারটি আসল আধার কার্ড, দু’টি প্রিন্টার, ল্যাপটপ, ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার, রেটিনা স্ক্যানিং মেশিন, ক্যামেরা উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিসের দাবি, ধৃতরা সেখানে বসে জাল আধার কার্ড তৈরি করছিল। যদিও তারা আধার কার্ড তৈরির কোনও বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি।
অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের পরই জালিয়াতি চক্রের বিভিন্ন বিষয় সামনে আসছে। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতরা আধারের ওয়েবসাইটে অ্যাক্সেস নেওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে অথরাইজড এজেন্টের আইডি-পাসওয়ার্ড জোগাড় করত। এরপর আধারের ওয়েবসাইটে টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন বাইপাস করার জন্য বিশেষ আঠায় ছাপ দিয়ে তৈরি এজেন্টের নকল ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করত। তারপরই আধারের ওয়েবসাইটে ঢুকে জালিয়াতি করত। সাধারণত গ্রামীণ এলাকায় আধার কেন্দ্র কম রয়েছে। ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস সহ গুটিকয়েক জায়গাতেই আধার তৈরি কিংবা আপডেট করা যায়। চাহিদা থাকায় সেই সুযোগকেই কাজে লাগিয়েছিল ধৃতরা। তারা একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলেছিল। কোথায় এবং কবে ওই আধার কার্ড তৈরি করা হবে তার সমস্ত আপডেট দেওয়া হতো সেখানে। অনেকেই ব্যাঙ্কে লাইন না দিয়ে আধার আপডেটের জন্য সেখানে যেতেন। তাঁদের কাছ থেকে অনেক বেশি টাকা নিত ধৃতরা। পাশপাশি ধৃতরা জাল আধার কার্ডও তৈরি করত বলে পুলিসের দাবি।
পুলিসের ভয়ে ধৃতরা কখনোই একটি এলাকায় একনাগাড়ে কাজ চালাত না। মাঝেমধ্যেই তারা তাদের অবস্থান বদলাত। সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিনে একটি থানা এলাকায় থাকলে পরের দিন অন্য এলাকায় চলে যেত। মঙ্গলবার সকালেও আধারের কাজ চলবে বলে হোয়াটস গ্রুপে আপডেট দিয়েছিল ধৃতদের একজন।
ধৃতরা কোথা থেকে ওই আইডি জোগাড় করেছিল, কীভাবে এই জালিয়াতি চালাত, কাদের জাল আধার তৈরি করে দেওয়া হতো তার উত্তর খুঁজছে পুলিস। জেলা পুলিসের এক আধিকারিক বলেন, ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হচ্ছে। তদন্ত চলছে। নিজস্ব চিত্র