ইন্দ্রজিৎ রায়, বোলপুর: শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লি মেলার মাঠে দেহ ব্যবসা সহ অসামাজিক কাজকর্মের অভিযোগ তুলে কঠোর পদক্ষেপ নিতে চলেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তবে, স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে এ নিয়ে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
বেশ কিছুদিন ধরেই পূর্বপল্লির মাঠে অসামাজিক কাজকর্ম নিয়ে অভিযোগ উঠছিল। সেটা কানে যাওয়ার পর নড়েচড়ে বসে বিশ্বভারতী। মাঠটির উপর নজরদারিও শুরু হয়। তাতে নজরে আসে, মাঠের ভিতর চার চাকা নিয়ে প্রবেশ, মাঠজুড়ে ছড়ানো ছিটানো প্লাস্টিক, সন্ধ্যা নামলেই শুরু হয়ে যায় দেহ ব্যবসা ও নেশার আসর। নানা মহল থেকে ওঠা অভিযোগের সত্যতা মেলে বলে জানা গিয়েছে। স্বভাবতই আর দেরি না করে মাঠে প্রবেশের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ জারি করতে উঠেপড়ে লেগেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এখন গরমকাল। সন্ধ্যার দিকে স্বস্তি পেতে অনেকেই মেলার মাঠে সময় কাটাতে পছন্দ করেন। কিন্তু, অনেকেই মাঠে বসে মদ্যপান করে থাকে বলে অভিযোগ। এমনকী অন্ধকার কিছুটা গাঢ় হলেই আড়ালে আবডালে দেহ ব্যবসাও শুরু হয়েছিল বলে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। এমনটাই দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিকের। সেই কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সম্পত্তিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ জারি করতে চলেছে বিশ্বভারতী। মাঠে ঢোকার সময়সীমাও খুব দ্রুত বেঁধে দেওয়া হবে বলে বিশ্বভারতী সূত্রের খবর।
একটা সময় পর্যন্ত পূর্বপল্লির মাঠ উন্মুক্তই ছিল। এতে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে বলে মাঠ জুড়ে পাঁচিল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। পাঁচিল তোলার কাজ শুরু হলে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। কর্তৃপক্ষ তোয়াক্কা না করে পাঁচিল তুললে ২০২০ সালের ১৭ আগস্ট পৌষমেলার মাঠে ধুন্ধুমার কাণ্ড বাঁধে। তীব্র আন্দোলনে জেরে জেসিবি মেশিন দিয়ে ভেঙে ফেলা হয় মেলার প্রবেশের মূল ফটক। পরবর্তী সময়ে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে কলকাতা হাইকোর্ট। আড়াই ফুটের পাঁচিল ও চার ফুটের ফেন্সিং দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। পাঁচিলের পাশাপাশি মেলার মাঠের বিভিন্ন প্রান্তে বড় বড় ফটকও বসানো হয়। শান্তিনিকেতনের সেন্ট্রাল অফিস ও লাইব্রেরি যাওয়ার রাস্তার ফটকগুলির বলাকা ও পুরবী নামকরণ করে বিশ্বভারতী। এরপর মেলার মাঠে প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি শুরু করে কর্তৃপক্ষ। তবে বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর আমল পর্যন্তই সেই ব্যবস্থা কার্যকর ছিল। তার অবসরের পর পুনরায় শহরের কচিকাঁচারা খেলাধুলো শুরু করে মাঠে। স্থানীয়রাও মেলার মাঠে বসছিলেন। ইদানীং টোটো, চারচাকা, বাইক প্রভৃতি যানবাহন নিয়ে প্রবেশ করার অভিযোগ উঠছিল। এর ফলে মাঠ নষ্ট হওয়ার অভিযোগ তুলেছে কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয়, সন্ধ্যা হলেই মদ, গাঁজার মতো নেশার আসর ও অন্ধকারের সুযোগে দেহ ব্যবসার মতো গুরুতর অভিযোগও উঠছিল। জানা গিয়েছে, সন্ধ্যা সাড়ে আটটার পর মেলার মাঠে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চলেছে কর্তৃপক্ষ। যানবাহন নিয়েও প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলেও জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘ভুলে গেলে চলবে না মেলার মাঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি। সেখানে যেভাবে অপকর্ম চলছিল, সেগুলো বরদাস্ত করা যায় না। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিতে চলেছি।’