অভিষেক পাল, বহরমপুর: ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধ আবহে পাকিস্তানকে প্রকাশ্যে সমর্থন করার পর ‘বয়কট তুরস্ক’ প্রচার দেশজুড়ে গতি পেয়েছে। তার প্রভাব পড়েছে দেশের পূর্ব সীমানার সীমান্তবর্তী জেলা মুর্শিদাবাদেও। তুরস্কের আপেলে নাক সিটকানো শুরু হয়েছে কয়েকদিন আগেই। এবার বাজারে এসে ফল বিক্রেতাদের ‘তুরস্কের আপেল কিনবেন না’ বলে সরাসরি জানিয়ে দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ফল বিক্রেতাদের কাছে তুরস্কের আপেল আমদানি বন্ধ হলেও, পুরনো স্টক খালি করতেই হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। কেন্দ্রীয় সরকারের একটি তথ্য বলছে, ভারত ৪০টি দেশ থেকে আপেল আমদানি করে। সেগুলির মধ্যে অন্যতম তুরস্ক। ২০২৩-২০২৪ অর্থবর্ষে তুরস্ক থেকে ভারতে আপেল এসেছিল প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার মেট্রিক টন। যার পরিমাণ সর্বকালের মধ্যে সেরা।
ভারতকে আক্রমণে পাকিস্তানকে সাহায্য করেছে তুর্কি। যুদ্ধজাহাজ ও ড্রোন পাঠিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে আস্ফালন দেখিয়েছে তারাও। অথচ কয়েকবছর আগে বিধ্বংসী ভূমিকম্পে যখন তছনছ হয়েছিল তুরস্ক, তখন বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে সবার আগে পাশে দাঁড়িয়েছিল ভারত। অথচ এই যুদ্ধ আবহে পাকিস্তানকে লাগাতার সমর্থন করে গিয়েছে তারা। সেজন্য ভারতে আসা তুরস্কের যাবতীয় জিনিস বয়কটের ডাক দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সবথেকে আগে বয়কট হচ্ছে এই লালটুকটুকে তুর্কির আপেল। কমদামে আপেল বিক্রির টোপ দিয়েও ক্রেতাদের মনজয় করতে পারছে না ফল বিক্রেতারা। অনেকেই লোকসানের আশঙ্কা করছেন। বহরমপুরের এক পাইকারি ফল বিক্রেতা বলেন, আমরা তুরস্ক থেকে আপেল আমদানি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিয়েছি। এখন আমরা হিমাচল, উত্তরাখণ্ড, ইরান এবং অন্যান্য জায়গা থেকে আপেল আমদানি করছি। এই সিদ্ধান্ত দেশপ্রেমের চেতনায় অনুপ্রাণিত এবং সরকারের সমর্থনে নেওয়া হয়েছে। তবে আমাদের কাছে যে স্টক আগে তোলা আছে সেগুলি বিক্রি করতে পারছি না। রানিবাগানের এক ফল ব্যবসায়ী মাধব দাস বলেন, তুর্কির আপেলের চাহিদা প্রায় ৫০শতাংশ কমে গিয়েছে এবং ক্রেতারাও এখন প্রকাশ্যে সেগুলো বয়কট করছেন। আমারও অন্য আপেল তুলছি।
বহরমপুরের কোর্ট মার্কেটের ফল বিক্রেতা যুবক সোলেমান আনসারি বলেন, সারা বছর যা আপেল বিক্রি করেছি তার ৮০ শতাংশ তুর্কি থেকে আনা হয়েছে। নতুন করে আর না আনলেও, আমাদের কাছে যে পরিমাণ স্টক আছে তা বিক্রি করতে পারছি না। সাধারণ মানুষ এই আপেল নিতে চাইছে না। অনেক টাকার লোকসান হবে। বহরমপুরের বাসিন্দা গৌতমকুমার রায় ও প্রলয় হালদার বলেন, তুর্কিকে আমরা অনেক সাহায্য করেছি। এখানকার টন টন আপেল ভারত কিনে নিয়েছে। তাতে ভারতীয় মুদ্রায় আর্থিকভাবে লাভ করতে পেরেছে ওঁরা। কিন্তু আর নয় তুরস্ক। যেভাবে পাকিস্তানকে সহযোগিতা করল তাদেরকে আর বন্ধু ভাবা যাবে না। আমরা তুরস্কের সমস্ত কিছুই বর্জন করব। বাজারে সবথেকে বেশি ওখানকার আপেল আসে। সেই আপেল আমরা কেউ কিনছি না। রঘুনাথগঞ্জ শহরের একজন ক্রেতা মনিরুজ্জামান শেখ বলেন, আমাদের দেশের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো ওই দেশ থেকে পণ্য কেনার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই, তাহলে আমরা কেন কিনব? আমাদের দেশেও অন্যান্য বিকল্প রয়েছে। আপেল আমাদের দেশেও হয়। সেই আপেল খাব। সরকারের উচিত এই ধরনের দেশের পণ্য নিষিদ্ধ করা এবং দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা।