বিরাট-প্রভাব! প্রেমবন্ধন অটুট করতে বৃন্দাবন যাওয়ার পথে উদ্ধার কিশোরী
বর্তমান | ১৬ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: বাইশ গজে গর্জন থামিয়ে স্ত্রী অনুষ্কা এবং দুই সন্তানকে নিয়ে বৃন্দাবনে গিয়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটার বিরাট কোহলি। সেখানে প্রেমানন্দ গোবিন্দশরণ মহারাজের সামনে হাঁটুমুড়ে বসে প্রার্থনা করেছিলেন সস্ত্রীক কোহলি। সেই মুহূর্তের ছবি ঝড়ের গতিতে ভাইরাল হয়ে যায় নেট বিশ্বে।
সেই দৃশ্যই গভীর প্রভাব ফেলেছিল নদীয়া জেলার ধানতলার এক নাবালিকার মনে। মাত্র চোদ্দো বছর বয়স তার। প্রেমিকের সঙ্গে বৃন্দাবনে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়ে। বাড়ি থেকে বেরিয়েও পড়ে সে। প্রেমিক শিয়ালদহ বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছিল। স্বপ্নের গন্তব্য বৃন্দাবন। কিন্তু শেষপর্যন্ত বাধ সাধলেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এক কর্মী। তাঁরই তৎপরতায় রক্ষা পায় নাবালিকাটি।
জানা গিয়েছে, ধানতলা থানার নওপাড়ার বাসিন্দা ওই নাবালিকা। বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ি থেকে শিয়ালদহ যাওয়ার উদ্দেশ্যে সে বেরিয়ে পড়ে। রানাঘাট স্টেশন থেকে সে উঠে পড়ে লেডিজ স্পেশালে। পালপাড়া স্টেশনের কাছে ট্রেনের মধ্যে একা মেয়েকে দেখে সন্দেহ হয় মহিলা যাত্রীদের। তাঁদের মধ্যে ছিলেন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার তৃণাঞ্জনা চৌধুরী। তিনি এগিয়ে এসে কথা বলেন নাবালিকার সঙ্গে। কথাবার্তায় উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। যদিও প্রথমদিকে সেই কিছুই বলতে রাজি হচ্ছিল না।
ট্রেনের যাত্রীদের ওই কিশোরী জানায়, সে বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে শিয়ালদহ যাচ্ছে। কিন্তু কথায় অসঙ্গতি দেখে যাত্রীরা সন্দেহ প্রকাশ করেন। পরে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে নেয়, প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে শিয়ালদহ বাসস্ট্যান্ডে যাচ্ছে সে। যদিও সেখান থেকে তাঁদের কোথায় যাওয়ার কথা, তা বলেনি নাবালিকা। সে জানায়, বাবা জোর করে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন এবং প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছেন। তাই বাধ্য হয়ে বাড়ি ছেড়েছে সে। তাই সে আর বাড়ি ফিরতে চায় না।
তৃণাঞ্জনাদেবী যোগাযোগ করেন চাইল্ড লাইনের নদীয়া জেলার শাখা, শ্রীমা মহিলা সমিতির সঙ্গে। পরে বারাকপুর সংলগ্ন শ্যামনগর স্টেশনে নাবালিকাকে ট্রেন থেকে নামিয়ে রেল পুলিসের হাতে তুলে দেন তিনি। তখনই ওই নাবালিকা জানায়, প্রেমিকের সঙ্গে তার বৃন্দাবন যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সেটাই নাকি তাঁর স্বপ্নের জায়গা। এরপর রেল পুলিসের তত্ত্বাবধানে নাবালিকাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় বারাসাতের চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির আদালতে। তারপর তাকে সরকারি হোমে পাঠানো হয়।
তৃণাঞ্জনাদেবী বলেন, ‘পালপাড়ার কাছে আমরা জানতে পারি, একটি বাচ্চা মেয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। সে জানায়, বাবার ভয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে। তারপর ধীরে ধীরে বাকি কথাও বলে। বাবা-মা›র নাম, ফোন নম্বর জানতে চাইলে আমাদের কিছুই বলেনি। ও কিছুতেই বাড়ি ফিরতে চাইছিল না। আমরা পুলিসের সঙ্গে যোগাযোগ করি। শ্যামনগরে ওই নাবালিকাকে রেল পুলিসের হাতে তুলে দিই। তখন আমাদের জানায়, বন্ধুর সঙ্গে তার বৃন্দাবন যাওয়ার পরিকল্পনার কথা।’