সংবাদদাতা, তেহট্ট: বাংলাদেশের মেহেরপুরে বর্গি হামলায় ব্যবহৃত খড়্গ হাতে সিদ্ধেশ্বরী কালীর পুজো হয়ে আসছে দীর্ঘদিন। বর্তমানে নদীয়ার তেহট্ট থানার বেতাই বাজারে বাংলা ১৩৬৫ সাল থেকে লাখো ভক্ত সমাগমের সঙ্গে হয়ে আসছে এই পুজো। প্রথা মেনে সিদ্ধেশ্বরী পুজো উপলক্ষ্যে এখনও ছাগবলির প্রচলন রয়েছে। প্রতিবছর বৈশাখী সংক্রান্তি তিথিতে এপার ওপার দুই বাংলাতেই প্রতিষ্ঠিত মূর্তিতেই সিদ্ধেশ্বরী পুজো হয়। একদিনের এই পূজা উপলক্ষ্যে মেলায় লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম ঘটে।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও লোক সংস্কৃতির লেখক লোকেশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, মেহেরপুরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ভৈরব নদীর উপর দিয়ে বাণিজ্য চলত। তৎকালে কোনও এক নবাব নৌকায় বাণিজ্যে যাবার পথে ঝড় জলে বাণিজ্যতরী ডুবে যায়। ভৈরবে স্রোতে ভাসতে ভাসতে ডাঙায় উঠে জনমানবহীন এলাকায় ইতস্তত ঘোরাঘুরি করতে থাকেন। এমন সময় এক গোয়ালিনীকে দেখতে পেয়ে তাঁরা তাঁকে বলেন, আমরা বাণিজ্য করতে যাওয়ার পথে নৌকাডুবির কবলে পড়েছি। আমরা ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত আমাদের একটু আশ্রয় দেবেন। গোয়ালিনী তাদেরকে সেবাযত্ন করেন। গোয়ালিনীর সেবার জন্য নবাব কয়েকশো বিঘা জমি তাঁকে দান করেন। সেই জমি রক্ষার্থে গোয়ালিনী বেশকিছু প্রহরীকে নিয়োগ করেছিলেন। ওই সম্পত্তি পাওয়ার পরে গোয়ালিনী ওই স্থানে সিদ্ধেশ্বরী মায়ের পুজো শুরু করেন। ইতিমধ্যেই শুরু হয় বর্গি হানা। সেই বগির হানায় সমস্ত কিছু নষ্ট হলেও বেদিটি অক্ষত ছিল।
সুলগ্ন ভট্টাচার্য বলেন, আমার ঠাকুমা প্রয়াত সুরেশ কুমারী সান্যালের কাছে শোনা বর্তমানে বাংলাদেশের মেহেরপুরে গড়ের পুকুর কাটার সময় বর্গি হানার সময়ের একটি খড়্গ উদ্ধার হয়। স্থানীয় মানুষ খড়্গটিকে পুরনো ওই বেদিতে রেখে স্থায়ীভাবে মূর্তি গড়ে পুনরায় সিদ্ধেশ্বরী মায়ের পুজো শুরু করেন। দেশভাগের পরে কিছু পরিবার ওপার বাংলা থেকে উঠে এসে বেতাই এলাকায় বসবাস শুরু করেন। মেহেরপুরের পূজারীর বংশধরের কয়েকজন এপার বাংলায় চলে আসেন। একদিন সুরেশ কুমারী সান্যাল পূজারী রামপ্রসাদ চক্রবর্তীকে বলেন, আপনারা বংশ পরস্পরায় ওপার বাংলায় পুজো করে আসছেন। এপার বাংলার পুজোটাও আপনারা করুন। সেই থেকে এই পুজো শুরু হয়। • নিজস্ব চিত্র