• সিপিএমের যুব সভাপতি পদে সুব্রতকে মানতে নারাজ, মীনাক্ষীর সামনেই কোন্দল, জেলা কমিটি থেকে পদত্যাগ ২০ জনের
    বর্তমান | ১৬ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: ‘ক্যাপ্টেন’ মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের সামনেই নিজেদের মধ্যে কোন্দলে জড়ালেন ডিওয়াইএফআইয়ের পুরুলিয়া জেলা কমিটির নেতারা। সেই কোন্দল তীব্রতর হয়ে একেবারে পদত্যাগ পর্যন্ত গড়ায়।  বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া শহরের কৃষক ভবনে সংগঠনের তরফে জেলা কনভেনশনের আয়োজন করা হয়। সেখানে সভাপতি ও সম্পাদক নির্বাচন নিয়ে তুমুল বচসা বাধে যুযুধান দু’পক্ষের। জেলা কমিটির নেতা চিরঞ্জিৎ মুখোপাধ্যায়ের নাম সম্পাদক হিসেবে সর্বসম্মতভাবে নেমে নিলেও সভাপতি পদে সুব্রত মাহাতকে মানতে নারাজ ছিল একটি অংশ। যদিও দলের তরফে জোর করে নিজেদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, সুব্রতকেই সভাপতি পদে মানতে হবে। তাতেই তুমুল বিক্ষোভে সূত্রপাত। শেষমেষ, দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে ২০ জন সদস্য জেলা কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতে জেলার রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়েছে। 

    সংগঠনের নব নির্বাচিত জেলা সম্পাদক চিরঞ্জিৎ অবশ্য বলেন, ‘এরকম কোনও ব্যাপার নেই। সবকিছু সুষ্ঠুভাবেই হয়েছে। পার্টির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কিছু বলব না।’ বাম যুব সংগঠনের পুরুলিয়া জেলা কমিটিতে এই কোন্দলের শুরু ২০২৪ সালের মার্চে, আড়ষায় অনুষ্ঠিত জেলা সম্মেলনে। এর আগে সংগঠনের জেলা সম্পাদক ছিলেন সুনীল মাহাত, সভাপতি ছিলেন সুব্রত চৌধুরী। যদিও সূত্রের খবর, সেই সম্মেলনে পার্টির তরফে সভাপতি হিসেবে সিপিএমের জেলা সম্পাদকের ‘স্নেহভাজন’ সুব্রত মাহাতর নাম মনোনয়ন করা হয়। সেই সময় সুব্রত এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক ছিলেন। তবে, ছাত্র সংগঠন থেকে আসা একজনকে হঠাৎ করেই যুব নেতৃত্বের পদে মানতে চাননি অনেকেই। বিক্ষোভের মুখে পড়ে সম্মেলন ভেস্তে যায়। চিরঞ্জিৎ মুখোপাধ্যায়কে সংগঠনের কনভেনর করা হয়। এরপর লোকসভার নির্বাচনের পর সংগঠনের তরফে সম্পাদক ও সভাপতি নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু পার্টি নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় সেবারেও বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। দীর্ঘসময় পর ফের বৃহস্পতিবার ডিওয়াইএফআইয়ের কনভেনশনের আয়োজন হয়। এদিনের কনভেনশনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা, রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য সফিকুল সাদ্দার প্রমুখ। সংগঠনের জেলা কমিটির মোট ৩২ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এবারেও পার্টি নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় ছিল। সম্পাদক হিসাবে চিরঞ্জিৎ ও সভাপতি হিসাবে সুব্রত মাহাতর নাম প্রস্তাব করা হয়। সম্প্রতি সুব্রতকে এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাঁকেই হঠাৎ করে ডিওয়াইএফআইয়ের সভাপতি করার ব্যাপারে আপত্তি তোলেন সংগঠনের অনেকেই। সূত্রের খবর, মীনাক্ষী সবাইকে ঐক্যমতে আসার জন্য অনুরোধ করেন। সংগঠনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত ধার্য হলে জেলা কমিটির ২০ জন পদত্যাগ করেন। নতুন সম্পাদক মণ্ডলীর ১৫ জনের মধ্যে ৯ জন পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। পদত্যাগী এক নেতা ক্ষোভের সুরে বলেন, পার্টি অবশ্যই সম্পাদক ও সভাপতি ঠিক করে দিতে পারে। তবে এমন কাউকেই বেছে নেওয়া উচিত ছিল যিনি সংগঠনের নিয়মিত কাজ করেন। বারবার পার্টির চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত আমরা মানতে পারছি না। তাই এই পদত্যাগ।

    সিপিএম পার্টির জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়কে এনিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান। বলেন, ‘সংগঠনের মধ্যে মত বিনিময় হয়েছে। আলাপ আলোচনা হয়েছে। সভা সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন হয়েছে।’ ডিওয়াইএফআইয়ের নবনির্বাচিত জেলা সভাপতি এনিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে চাননি।
  • Link to this news (বর্তমান)