নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: আগামী বিধানসভা নির্বাচনে মহিলা ভোট টানতে ‘অঞ্চলে আঁচল’ নামের নতুন কর্মসূচি নিয়েছিল মহিলা তৃণমূল কংগ্রেস। গত ১ এপ্রিল থেকে ১৫ মে পর্যন্ত রাজ্যের প্রত্যেক ব্লকের প্রত্যেক অঞ্চলে এই কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দিয়েছিল ছিল তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। অথচ, পুরুলিয়া জেলায় কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ল এই কর্মসূচি। খোদ জেলা সভাপতি, মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিধায়কের এলাকাতেই এই কর্মসূচি পালিত হল না। দেড় মাস সময় পেয়েও কেন এই কর্মসূচি পালনে ব্যর্থ হল নেতৃত্ব? প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। এনিয়ে জেলা থেকে রিপোর্ট পৌঁছেছে রাজ্যে।
তৃণমূলের জেলা মহিলা সভানেত্রী সুমিতা সিং মল্ল মানছেন, ‘জেলার অধিকাংশ অঞ্চলেই ‘অঞ্চলে আঁচল’ কর্মসূচি সফল ভাবে পালিত হলেও বেশকিছু অঞ্চলে এখনও বাকি রয়েছে। কর্মসূচি সফল করতে ব্লক নেতৃত্বকে বারংবার অনুরোধ করেছি। তা সত্ত্বেও কেন কর্মসূচি পালিত হল না, কোথায় সমস্যা হল, তা খোঁজ নিয়ে দেখব।’ প্রসঙ্গত, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী সহ বিভিন্ন প্রকল্পে মহিলারা কীভাবে উপকৃত হচ্ছেন সেকথা তুলে ধরতে ২৬-এর নির্বাচনের আগে ‘অঞ্চলে আঁচল’ নামের এই কর্মসূচি নিয়েছিল রাজ্যের শাসক দল। পুরুলিয়া জেলার ১৭০টি অঞ্চলেই এই কর্মসূচি পালনের কথা ছিল। দায়িত্বও বন্টন করে দেওয়া হয়েছিল। অথচ, খোদ জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার কাশিপুর বিধানসভা, মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডুর মানবাজার বিধানসভা, তৃণমূল বিধায়ক সুশান্ত মাহাতর বাঘমুন্ডি বিধানসভার একটি অঞ্চলেও এই কর্মসূচি পালিত হয়নি। জয়পুর বিধানসভারও অধিকাংশ অঞ্চলেই কর্মসূচি পালনে ব্যর্থ তৃণমূল। বলরামপুর বিধানসভাতেও এই কর্মসূচি মুখ থুবড়ে পড়েছে।
কর্মসূচি ব্যর্থ হওয়ার দায় অনেকেই মহিলা নেতৃত্বের উপরেই ঠেলছেন। যদিও রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছেন, তৃণমূলের মহিলা সংগঠন তো এখনও অনেকাংশে মাদারের উপরেই নির্ভরশীল। ফলে এর দায় কোনও ভাবেই জেলা থেকে ব্লকের সভাপতি, বিধায়করা এড়িয়ে যেতে পারেন না। তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়াও মানছেন, ‘অনেক অঞ্চলেই আমরা ‘অঞ্চলে আঁচল’ কর্মসূচি পালন করতে পারিনি। ভোটার লিস্ট নিয়ে কর্মীরা ব্যস্ত হয়ে যাওয়ার কারণেই এই সমস্যা হয়েছে। যে যে অঞ্চলে কর্মসূচি হয়নি, তাঁদের অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়েছে। আগামী দশ দিনের মধ্যে সবাইকে কর্মসূচি সফল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু বলেন, আমি ক্যাবিনেটে ব্যস্ত ছিলাম। ফিরেই এই কর্মসূচি শুরু করে দেব।’ অনেকের খোঁচা, দেড় মাস ধরে কি একটা অঞ্চলেও মন্ত্রীর কর্মসূচি পালনের সময় হল না? বিধায়ক সুশান্ত মাহাত বলেন, ‘এটা তো মহিলাদের কর্মসূচি। কর্মসূচি সফল করার দায়িত্ব মহিলাদের মধ্যেই বন্টন করে দেওয়া হয়েছিল। তারপরেও কেন কর্মসূচি সফল হল না, সে নিয়ে মহিলা নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলব।’
তৃণমূল সূত্রের খবর, এরপর আজ থেকে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ‘তোমার ঠিকানা, উন্নয়নের নিশানা’ কর্মসূচি চলবে। ‘দিদি মহিলাদের সাথে, মহিলাদের পাশে’ এই প্রচারপত্র নিয়ে মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিতরণ করবেন।