নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রাজ্য সরকার তাঁদের সঙ্গে আলোচনা না করেই সুপ্রিম কোর্টের চাকরি বাতিলের রায়কে চ্যালেঞ্জ করেছে। রিভিউ পিটিশনের ড্রাফটও তৈরি করেছে। কেন? দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বলবৎ থাকা রায় কেন মেনেছে রাজ্য সরকার? কেন তারা নতুন নিয়োগবিধি তৈরি করেছে এবং চাকরির পরীক্ষা নিতে চলেছে? এই অভিযোগ চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের। আর এর জেরেই বৃহস্পতিবার বিকাশ ভবন অভিযান করে ধুন্ধুমার বাঁধালেন তাঁরা। ঢিলেঢালা পুলিসি প্রতিরোধের সুযোগ নিয়ে বিকাশ ভবনের গেট ভেঙে ঢুকলেন। সারাদিন সরকারি কর্মীদের অবরুদ্ধও করে রাখলেন তাঁরা। যদিও, পুলিস রাতে গিয়ে বলপ্রয়োগ করে। আন্দোলনকারীদের ছত্রাখান করে কর্মীদের অধিকাংশকেই বের করে দিতে সক্ষম হয়। পুলিস ও আন্দোলনকারী দু’পক্ষেরই একাধিক ব্যক্তি জখম হয়েছেন। অবরুদ্ধ অবস্থায় মরিয়া হয়ে দু’জন বিকাশ ভবনের কার্নিশ থেকে ঝাঁপ মারতে গিয়েও জখম হন।
রাজ্য সরকার তথা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আবেদনের ভিত্তিতে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষকদের চাকরির স্থায়িত্ব দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তবে শর্ত ছিল, ৩১ মে’র মধ্যে নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। তিন মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে নিয়োগ প্রক্রিয়া। আইনি লড়াই চালানোর পাশাপাশি বলবৎ থাকা রায় মেনে এগতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকেও। তবে চাকরিহারাদের দাবি, তাঁরা নতুন করে পরীক্ষায় বসবেন না। এমনকী, রিভিউ পিটিশনের বয়ান কী হবে, তা তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাতে সম্মত হয়নি সরকার। তার জেরেই এদিনের এই আগ্রাসী আন্দোলন। এদিকে, বিকাশ ভবনে একটি কাজে এসে আন্দোলনকারীদের মধ্যে আটকে পড়েন স্থানীয় কাউন্সিলার তথা বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত। তাঁর গাড়ির সামনে বসে পড়েন চাকরিহারা শিক্ষকরা। চেয়ারম্যান বেশ কিছুক্ষণ তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। তবে, তাতে লাভ হয়নি। ইতিমধ্যে চলে আসেন তাঁর কিছু অনুগামী। স্বভাবে ডাকাবুকো সব্যসাচীবাবু বেশিক্ষণ মেজাজ ধরে রাখতে পারেননি। তিনি আন্দোলনকারীদের হুমকি দেন বলে অভিযোগ। তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে কয়েকজন শিক্ষক এবং সাংবাদিকদের মারধরের অভিযোগও ওঠে। সেগুলি অবশ্য অস্বীকার করেছেন সব্যসাচীবাবু। সংবাদমাধ্যমে দাবি করেছেন, তিনি নিয়োগকর্তাও নন আর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বাতিল হওয়া চাকরি তিনি ফেরানোর অধিকারীও নন। ঘণ্টা দু’য়েকের মধ্যে অবশ্য তিনি বেরিয়ে যেতে সক্ষম হন। তবে চেয়ারম্যানকে ঘেরাও করা এবং তাঁর অনুগামীদের শিক্ষকদের উপরে চড়াও হওয়ার মধ্যে পুলিস সেভাবে সক্রিয় ছিল না বলেই প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ। আন্দোলনের নেতারা সব্যসাচী দত্তর শাস্তির দাবি তুলেছেন সরকারের কাছে।
সারাদিন কার্যত দর্শকের ভূমিকায় থাকা পুলিস অবশ্য সন্ধ্যার পর সক্রিয় হয়ে ওঠে। তার ফলেই বেশি রাত পর্যন্ত আটক থাকা বিকাশ ভবনের কর্মীরা বেরনোর সুযোগ পান। মুক্তি পান বিভিন্ন কাজে আসা ভিজিটররাও। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে পুলিস কর্মীদের ঢিল মারার অভিযোগ ওঠে। উর্দিও ছিঁড়ে দেওয়া হয়। আন্দোলনকারীরাও পুলিসের দিকে মারধর, শিক্ষিকাদের হেনস্তার অভিযোগ তুলেছে। সারারাত কর্মী-আধিকারিকদের ঘেরাও রাখতে না পেরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন আন্দোলনের নেতারা।