• পূর্ণমের উপর মানিসক নির্যাতন হয়েছে, দাবি স্ত্রীর
    এই সময় | ১৬ মে ২০২৫
  • প্রদীপ চক্রবর্তী, রিষড়া

    পাকিস্তানে বন্দি থাকা অবস্থায় বিএসএফ জওয়ান পূর্ণম কুমার সাউয়ের উপর কোনও শারীরিক অত্যাচার না হলেও ভয়ঙ্কর মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাঁকে। বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমের সামনে এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন পূর্ণমের স্ত্রী রজনী।

    তাঁর দাবি, পূর্ণমের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানতে পেরেছেন, সীমান্ত এলাকা থেকে পাক রেঞ্জাররা পূর্ণমকে আটক করার পরে চোখে কাপড় বেঁধে তাঁকে কোনও এক অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর একটা ঘরে বসিয়ে তাঁকে একটানা জেরা করা হয়।

    ভারতীয় সেনাবাহিনীর সম্পর্কে বিভিন্ন গোপন তথ্য জানার চেষ্টা করেন পাক সেনা আধিকারিকরা। ঠিক কোন মতলবে তিনি সীমান্ত টপকে পাকিস্তানের ভিতরে ঢুকে পড়েছিলেন, তা নিয়ে লাগাতার প্রশ্ন করে গিয়েছেন তাঁরা। রজনীর কথায়, ‘পূর্ণমের সঙ্গে জাসুসের (গুপ্তচর) মতো ব্যবহার করেছে ওরা।’ তার জন্য প্রচণ্ড মানসিক ধকল নিতে হয়েছে পূর্ণমকে।

    বুধবার সকালে পাকিস্তান থেকে দেশে ফেরার পরে দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ একজনের মোবাইল ফোন থেকে স্ত্রী’কে ভিডিও কল করেছিলেন পূর্ণম। তখন বাড়ির লোকেদের খোঁজখবর নেওয়া ছাড়া বেশিক্ষণ কথা বলতে পারেননি।

    রজনী জানিয়েছে, বুধবার রাত ন’টা নাগাদ অন্যের ফোন থেকে ফের বাড়িতে ফোন করেন করে পূর্ণম। রজনীর দাবি, রাতে ফোনে কথা বলার সময় পাকিস্তানে থাকার সময় তাঁর সঙ্গে পাক সেনারা কী আচরণ করেছিল, সেই অভিজ্ঞতার কথা স্ত্রীকে জানায় পূর্ণম।

    রজনী জানিয়েছে, সারা দেশবাসী পূর্ণমকে নিয়ে মাতামাতি করলেও পাকিস্তান তাঁকে একজন সাধারণ বন্দির মতোই দেখেছে। গোপন তথ্য জোগাড় করার জন্য পূর্ণমের উপরে নানা ভাবে মানসিক চাপ তৈরি করা হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রশ্নবানে বিধস্ত করা হয়েছে। রাতে ভালো করে ঘুমোতে পারেননি।

    তার পরেও অবশ্য এক মুহূর্তের জন্যও ভেঙে পড়েননি পূর্ণম। সুকৌশলে পাক সেনাদের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন। তবে আতিথেয়তায় কোনও খামতি ছিল না। পাকিস্তানের হাতে বন্দি থাকার সময়ে পূর্ণমকে তাঁর পছন্দের নিরামিষ খাবারই খেতে দেওয়া হতো। সকালে খেতে দেওয়া হতো চা–বিস্কুট। দুপুরে ও রাতে থাকত ভাত, রুটি, সব্জি। বিরিয়ানি দেওয়া হলেও পূর্ণম অবশ্য সেটা সযত্নে এড়িয়ে যান।

    বৃহস্পতিবার সকালে বিএসএফের দু’জন আধিকারিক রিষড়ার বাড়িতে এসে রজনীর সঙ্গে কথা বলে যান। তবে বিএসএফের সঙ্গে তাঁর কী কথাবার্তা হয়েছে, সে ব্যপারে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে রাজি হননি রজনী।

    পাকিস্তান থেকে পূর্ণমকে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য এ দিন আবারও কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন রজনী। বিপদের দিনে তাঁদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করার জন্য সারা দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

    রজনী বলেন, ‘সবাই আমাদের সমর্থন করেছেন। এই যুদ্ধ আমার একার ছিল না। যখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্তে সংঘর্ষ চলছে, সেই সময় আমার স্বামী পাকিস্তানে বন্দি। আমার স্বামী যাতে সুস্থ ভাবে দেশে ফিরে আসতে পারেন, তার জন্য সবাই মিলে প্রার্থনা করেছেন। দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং আমাদের রাজ্যের মুূখ্যমন্ত্রী এর জন্য উদ্যোগী হয়েছেন। গোটা দেশ আমাদের সঙ্গে ছিল। তাঁদেরকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই।’

  • Link to this news (এই সময়)