সঞ্জয় দে, দুর্গাপুর
বিশ্বের সব থেকে দামী আম মিয়াজ়াকি। ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার ফেস্টিভালে এক কেজি মিয়াজ়াকি আমের দাম উঠেছিল ২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। গত দু’বছর ধরে জাপানের এই আম এখন পরীক্ষামূলক ভাবে চাষ হচ্ছে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের রুক্ষ মাটিতে।
মিয়াজ়াকি ছাড়া ফ্লোরিডার ব্ল্যাক ম্যাঙ্গো, হোয়াইট হিমালয়ান মালবেরি, রেড ডেকা (লাল কলা) সমেত একাধিক বিদেশি ফলের চাষ হচ্ছে দুর্গাপুর পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের মলানদিঘি পঞ্চায়েতের লোহাগুড়ি গ্রামে।
ইতিমধ্যে রাজ্যের মন্ত্রী তথা দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক প্রদীপ মজুমদারের মাধ্যমে লোহাগুড়ি গ্রামের মিয়াজ়াকি আমি পৌঁছে গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। রুক্ষ কাঁকুরে মাটিতে মিয়াজ়াকি আম চাষ করে অসাধ্য সাধন করেছেন রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের প্রাক্তন আধিকারিক তথা দুর্গাপুরের বাসিন্দা অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী।
মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘অনিরুদ্ধ অনেকদিন ধরে এখানে পরীক্ষামূলক ভাবে বিদেশি আম ও নানা ধরনের ফল চাষ করছেন। অনিরুদ্ধর চাষ করা মিয়াজ়াকি আম আমি খেয়েছি ও মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়েছি। এই আম বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করা গেলে খুব ভালো হবে।’
রাজ্য সরকারের প্রাণী বিকাশ দপ্তরের ইউনিট ইনচার্জ পদে কর্মরত ছিলেন অনিরুদ্ধ। ছিলেন সংস্থার এগ্রিকালচার বিভাগে। পড়াশোনা করছেন কল্যাণী কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই সূত্রে কৃষিকাজের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ অনিরুদ্ধর। মলানদিঘি পঞ্চায়েতের লোহাগুড়ি গ্রামে অনিরুদ্ধর বন্ধু শান্তনু মুখোপাধ্যায়ের ১৭ বিঘা জমি রয়েছে।
সেই জমিতে মিয়াজ়াকি, ব্ল্যাক ম্যাঙ্গো, রেড ডোকা, হোয়াইট হিমালয়ান মালবেরি ও বিভিন্ন রঙের নারকেল চাষ করছেন অনিরুদ্ধ। কল্যাণী কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা বিদেশি ফুল ও ফলের চারা সরবরাহ করেন তাঁদের কাছ থেকে চারা কিনে এনে দুর্গাপুরে চাষ করছেন তিনি।
গত বছর প্রথম মিয়াজ়াকি আমের চাষ করেছিলেন। গত বারের তুলনায় এ বারের ফলন আরও ভালো হয়েছে বলে দাবি করেন অনিরুদ্ধ। এর মধ্যে একটি আইসক্রিম সংস্থা হোয়াইট হিমালয়ান মালবেরি নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কিন্তু বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদন শুরু না–হওয়ায় দেওয়া যায়নি।
অনিরুদ্ধর কথায়, ‘গত দু’বছর ধরে নানা ধরনের বিদেশি ফল পরীক্ষামূলক ভাবে চাষ করেছি। সফল হয়েছি। এ বার বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ নিয়ে মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের সঙ্গে কথা বলব।
মিয়াজ়াকি আমের ব্যাপারে এখন আর কাউকে বলতে হয় না। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে এই আমের পুষ্টিগুণ, স্বাদ সম্বন্ধে অনেকেই ওয়াকিবহাল। মলানদিঘি গ্রামে যে সব চাষি রয়েছেন তাঁদের এই আম চাষের পদ্ধতি শিখিয়ে দিলে এখানে বাণিজ্যিক উৎপাদন সম্ভব। বহু মানুষ আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী তো হবেই, এলাকার আর্থিক উন্নয়নও ঘটবে।’