‘ডিএ সরকারি কর্মীদের ন্যায্য অধিকার। বারবার আদালতে তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। এ বার সুপ্রিম কোর্টও সেই কথাই জানাল।’ শুক্রবার রাজ্যের বকেয়া ডিএ-এর ২৫ শতাংশ মেটাতে বলার পরেই এই প্রতিক্রিয়া রাজ্য সরকারি কর্মীদের। শীর্ষ আদালতের রায়ে তাঁরা খুশি। তবে কোনও আনন্দ উচ্ছ্বাস করতে চান না। বৃহস্পতিবার বিকাশ ভবনের সামনে চাকরিহারাদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জের প্রতিবাদেই এই সিদ্ধান্ত।
রাজ্য সরকারি কর্মচারী পরিষদের সভাপতি দেবাশিস শীল এ দিন একহাত নেন রাজ্যকে। তিনি বলেন, ‘পরের পর তারিখ নেওয়ার খেলা শেষ হল। এই জয় গোটা দেশে নজির হয়ে থাকবে। রাজ্য সরকারি কর্মী, পেনশনভোগীদের জন্যও বড় জয়।’ তবে শুধু ২৫ শতাংশ নয়, বকেয়া ডিএ-এর বাকি ৭৫ শতাংশ দেওয়ার নির্দেশও সুপ্রিম কোর্ট দেবে বলে আশাবাদী তিনি। দেবাশিস বলেন, ‘২৫ শতাংশ দেওয়ার নির্দেশ দিলে ৭৫ শতাংশ মেটানোর নির্দেশও দেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীরা যে হারে ডিএ পান, সেই হারে ডিএ দেওয়ার দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন রাজ্য সরকারি কর্মীদের একাধিক সংগঠন। সেই মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট জানায়, ডিএ সরকারি কর্মীদের অধিকার। কেন্দ্রের দেওয়া হারে তা রাজ্যকে দিতে হবে। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে রাজ্য সরকার।
২০২২ সালের নভেম্বরে প্রথম বার ডিএ মামলা ওঠে দেশের শীর্ষ আদালতে। এর পর থেকে গত কয়েক বছরে বারবার পিছিয়েছে ডিএ মামলার শুনানি। তার পর ২০২৫ সালের মে মাসে অন্তর্বর্তী রায়ে এই নির্দেশ দিল আদালত। রাজ্য সরকারি কর্মচারী সংগঠনের সদস্যরা বলছেন, ‘এই নির্দেশ রাজ্য সরকারের গালে চপেটাঘাত। সুপ্রিম কোর্ট বুঝিয়ে দিল, ডিএ না দিয়ে পালানোর কোনও জায়গা নেই।’ তাঁদের দাবি, ‘রাজ্য সরকার আমাদের বলেছিল, ঘেউ ঘেউ করবেন না। এতদিন অন্যায় ভাবে টাকা আটকে রেখেছিল। এ বার মেটাতেই হবে।’
শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি জানিয়েছিলেন, এখনই বকেয়ার ২৫ শতাংশ দিতে হলে রাজ্যকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হবে। এই বিরাট আর্থিক বোঝায় রাজ্যের মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। তবে রাজ্য সরকারি কর্মীরা বলছেন, ‘আর্থিক পরিস্থিতিকে অজুহাত হিসেবে খাড়া করা যাবে না। মেলা, খেলায় কোটি কোটি টাকা খরচ করতে পারছে, আর ন্যায্য টাকা দেওয়ার বললেই টাকা নেই বলে দেবে, এ কেমন কথা!’
একই কথা বলছেন, আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যও। তিনি বলেন, ‘চার সপ্তাহের মধ্যে এই টাকা মেটাতেই হবে।’ সুপ্রিম কোর্টের এই মন্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চও। তাঁদের কথায়, ‘রাজ্য সরকারি কর্মীদের টাকা কেটে পকেট ভরানোর দিন শেষ।’